চিরকুমার-সভা

নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

    জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া। ( দীর্ঘনিশ্বাস )

তোমরা কি বাড়ির দিকে চলেছ।

শ্রীশ। বাড়ি কোন্‌ দিকে ভুলে গেছি ভাই।

পূর্ণ। আজ পথ ভোলবার মতোই রাতটা হয়েছে বটে। কী বল বিপিনবাবু।

শ্রীশ। বিপিনবাবু এ - সকল বিষয়ে কোনো কথাই কন না, পাছে ওঁর ভিতরকার কবিত্ব ধরা পড়ে। কৃপণ যে জিনিসটার বেশি আদর করে সেইটেকেই মাটির নীচে পুঁতে রাখে।

বিপিন। অস্থানে বাজে খরচ করতে চাই নে ভাই, স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছি। মরতে হলে একেবারে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে মরাই ভালো।

পূর্ণ। এ তো উত্তম কথা, শাস্ত্রসংগত কথা। বিপিনবাবু একেবারে অন্তিম কালের জন্যে কবিত্ব সঞ্চয় করে রাখছেন, যখন অন্যে বাক্য কবেন কিন্তু উনি রবেন নিরুত্তর। আশীর্বাদ করি অন্যের সেই বাক্যগুলি যেন মধুমাখা হয় —

শ্রীশ। এবং তার সঙ্গে যেন কিঞ্চিৎ ঝালের সম্পর্কও থাকে —

বিপিন। এবং বাক্যবর্ষণ করেই যেন মুখের সমস্ত কর্তব্য নিঃশেষ না হয় —

পূর্ণ। বাক্যের বিরামস্থলগুলি যেন বাক্যের চেয়ে মধুমত্তর হয়ে ওঠে —

শ্রীশ। সেদিন নিদ্রা যেন না আসে —

পূর্ণ। রাত্রি যেন না যায় —

বিপিন। চন্দ্র যেন পূর্ণচন্দ্র হয় —

পূর্ণ। বিপিন যেন বসন্তের ফুলে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে —

শ্রীশ। এবং হতভাগ্য শ্রীশ যেন কুঞ্জদ্বারের কাছে এসে উঁকিঝুঁকি না মারে।

পূর্ণ। দূর হোক গে শ্রীশবাবু, তোমার সেই ‘আবাহন' থেকে আর - একটা কিছু কবিতা আওড়াও। চমৎকার লিখেছে হে—

নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া।


আহা! একটি জীবনপ্রদীপের শিখাটুকু আর - একটি জীবনপ্রদীপের মুখের কাছে কেবল একটু ঠেকিয়ে গেলেই হয়, বাস্‌, আর কিছুই নয় — দুটি কোমল অঙ্গুলি দিয়ে দীপখানি একটু হেলিয়ে একটু ছুঁইয়ে যাওয়া, তার পরেই চকিতের মধ্যে সমস্ত আলোকিত।

( আপন মনে ) —

নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া।