প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিধুমুখী। তুমি একলা বসে বসে রাগ করো। আমি চললুম, আমি আর সইতে পারছি নে।
মন্মথ। শশধর, সে-ঘড়িটা তোমায় ফিরে নিয়ে যেতে হবে।
শশধর। তুমি যে লোহার সিন্দুক খুলতে যাচ্ছিলে, যাও-না।
মন্মথ। সে পরে হবে, কিন্তু ঘড়িটা এখনই তুমি নিয়ে যাও।
শশধর। তুমি তো আচ্ছা লোক। ঘড়ি তো নিয়ে গেলুম; তার পর থেকে আমার সময়টা কাটবে কী রকম? ঘরের লোকের কাছে জবাবদিহি করতে গিয়ে আমাকে যে ঘরছাড়া হতে হবে।
মন্মথ। না শশধর, ঠাট্টা নয়, আমি এ-সব ভালোবাসি নে।
শশধর। ভালোবাস না, কিন্তু সহ্যও করতে হয়। সংসারের এই নিয়ম।
মন্মথ। নিজের সম্বন্ধে হলে নিঃশব্দে সহ্য করতেম। ছেলেকে মাটি করতে পারি না।
শশধর। সে তো ভালো কথা। কিন্তু স্ত্রীলোকের ইচ্ছার একেবারে খাড়া উলটোমুখে চলতে গেলে বিপদে পড়বে। তার চেয়ে পাশ কাটিয়ে ঘুরে গেলে ফল পাওয়া যায়। বাতাস যখন উলটো বয়, জাহাজের পাল তখন আড় করে রাখতে হয়, নইলে চলা অসম্ভব।
মন্মথ। তাই বুঝি তুমি গৃহিণীর সকল কথাতেই সায় দিয়ে যাও। ভীরু!
শশধর। তোমার মতো অসমসাহস আমার নেই। যার ঘরকন্নার অধীনে চব্বিশ ঘণ্টা বাস করতে হয়, তাঁকে ভয় না করব তো কাকে করব। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বীরত্ব করে লাভ কী। আঘাত করলেও কষ্ট, আঘাত পেলেও কষ্ট। তার চেয়ে তর্কের বেলায় গৃহিণীর যুক্তিকে অকাট্য বলে কাজের বেলায় নিজের যুক্তিতে চলাই সৎপরামর্শ — গোঁয়ার্তমি করতে গেলেই মুশকিল বাধে। আমি চললেম, যা ভালো বোঝ করো।
মন্মথ। তোমার ছেলেটিকে যে বিলাতি পোশাক পরাতে আরম্ভ করেছ, সে আমার পছন্দ নয়।
বিধুমুখী। পছন্দ বুঝি একা তোমারই আছে। আজকাল তো সকলেই ছেলেদের ইংরেজি কাপড় ধরিয়েছে।
মন্মথ। (হাসিয়া) সকলের মতেই যদি চলবে, তবে সকলকে ছেড়ে একটিমাত্র আমাকেই বিয়ে করলে কেন।
বিধুমুখী। তুমি যদি একমাত্র নিজের মতেই চলবে, তবে একা না থেকে আমাকেই বা তোমার বিয়ে করবার কী দরকার ছিল।
মন্মথ। নিজের মত চালাবার জন্যও যে অন্য লোকের দরকার হয়।
বিধুমুখী। নিজের বোঝা বহাবার জন্য ধোবার দরকার হয় গাধাকে — কিন্তু আমি তো আর —
মন্মথ। (জিব কাটিয়া) আরে রাম রাম, তুমি আবার সংসারমরুভূমির আরব ঘোড়া। কিন্তু সে প্রাণিবৃত্তান্তের তর্ক এখন থাক্। তোমার ছেলেটিকে সাহেব করে তুলো না।
বিধুমুখী। কেন করব না। তাকে কি চাষা করব।
মন্মথ। লোহার সিন্দুকের চাবিটা —