গৃহপ্রবেশ

প্রতিবেশিনী। তা দিদি, সে কিছু বলে না ব’লেই কি—

মাসি। শুধু বলে না? ও-যে কখনো জাদুঘরে কখনো-বা বাঘভাল্লুক দেখতে যায়, এতেই তার আনন্দ।

প্রতিবেশিনী। বল কী দিদি। সেবাটা কি তার চেয়ে—

মাসি। ও তো বলে মণির পক্ষে এইটেই সেবা। যতীন নিজে বিছানায় বদ্ধ থাকে, মণি ঘুরে বেড়িয়ে এলে সেইটেতেই যতীন যেন ছুটি পায়। রুগীর পক্ষে সে কি কম।

প্রতিবেশিনী। কী জানি ভাই, আমরা সেকেলে মানুষ, ও-সব বুঝতে পারি নে। তা যা হোক, আমার ছেলেকে পাঠিয়ে দেব, দিদি। সে জগু ডাক্তারের ঠিকানা জানে। একবার তাকে ডেকে দেখাতে দোষ কী।

[ প্রস্থান
——————


রোগীর ঘরে

যতীন। এই যে, হিমি এসেছিস। আঃ বাঁচলুম। সেই ফোটোটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি নে, তুই একবার দেখ-না, বোন।

হিমি। কোন্‌ ফোটো, দাদা।

যতীন। সেই-যে বোটানিকেল গার্ড্‌‍নে মণির সঙ্গে গাছতলায় আমার যে-ছবি তোলা হয়েছিল।

হিমি। সেটা তো তোমার আলবামে ছিল।

যতীন। এই-যে খানিক আগে আলবাম থেকে খুলে নিয়েছি। বিছানার মধ্যেই কোথাও আছে— কিংবা নীচে পড়ে গেছে।

হিমি। এই-যে দাদা, বালিশের নীচে।

যতীন। মনে হয় যেন আর-জন্মের কথা। সেই নিমগাছের তলা। মণি পরেছিল কুসমি রঙের শাড়ি। খোঁপাটা ঘাড়ের কাছে নিচু করে বাঁধা। মনে আছে হিমি, কোথা থেকে একটা বউ-কথা-কও ডেকে ডেকে অস্থির হচ্ছিল। নদীতে জোয়ার এসেছে— সে কী হাওয়া, আর ঝাউগাছের ডালে ডালে কী ঝর‌্‌ঝরানি শব্দ। মণি ঝাউয়ের ফলগুলো কুড়িয়ে তার ছাল ছাড়িয়ে শুঁকছিল— বলে, আমার এই গন্ধ খুব ভালো লাগে। তার যে কী ভালো লাগে না, তা জানি নে। তারই ভালো লাগার ভিতর দিয়ে এই পৃথিবীটা আমি অনেক ভোগ করেছি। সেদিন যেটা গেয়েছিলি, সেই গানটি গা তো হিমি। লক্ষ্মী মেয়ে। মনে আছে তো?

হিমি। হাঁ মনে আছে।

গান

যৌবনসরসীনীরে

মিলনশতদল,

কোন্‌    চঞ্চল বন্যায় টলমল টলমল।

শরম-রক্তরাগে

তার   গোপন স্বপ্ন জাগে,

তারি   গন্ধকেশর-মাঝে

    এক    বিন্দু নয়নজল।

ধীরে বও ধীরে বও সমীরণ,