গৃহপ্রবেশ

সবেদন পরশন।

শঙ্কিত   চিত্ত মোর

পাছে   ভাঙে বৃন্তডোর,

তাই    অকারণ করুণায়

মোর   আঁখি করে ছলছল।


যতীন। সেদিন গাছের তলা কথা কয়ে উঠেছিল। আজ এই দেয়ালের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী একেবারে চুপ। ঐ দেয়ালগুলো তার ফ্যাকাসে ঠোঁটের মতো। হিমি, আলোটা আর-একটু কম করে দে। এপারে গাছে গাছে কতরকমের সবুজের উচ্ছ্বাস আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে, আর ওপারে কলের চিমনি থেকে ধোঁয়াগুলো পাক দিয়ে আকাশে উঠছে, তারও কী সুন্দর রঙ, আর কী সুন্দর ডৌল। সবই ভালো লাগছিল। আর তোদের সেই কুকুরটা— জলে মণি বারবার গোলা ফেলে দিচ্ছিল, আর সে সাঁতার দিয়ে—

হিমি। দাদা, তুমি কিন্তু আর কথা কোয়ো না।

যতীন। আচ্ছা কব না; আমি চোখ বুজে শুনব, সেই ঝাউগাছের ঝর ঝর শব্দ। কিন্তু হিমি, তুই আজ গাইলি, ও যেন ঠিক তেমন— কে জানে। আর-একটু অন্ধকার হয়ে আসুক, আপনা-আপনি শুনতে পাব— ধীরে বও, ধীরে বও, সমীরণ। আচ্ছা, তুই যা। ছবিটা কোথায় রাখলুম?

হিমি। এই-যে!

[ প্রস্থান
পাশের ঘরে মাসি ও অখিল

অখিল। কেন ডেকে পাঠিয়েছ কাকি।

মাসি। বাবা, তুই তো উকিল, তোকে একটা-কিছু করে দিতেই হচ্ছে।

অখিল। তারা তো আর সবুর করতে পারছে না— ডিক্রি করেছে, এখন জারি করবার জন্যে—

মাসি। বেশিদিন সবুর করতে হবে না। তারা তো তোরই মক্কেল। একটু বুঝিয়ে বলিস, ডাক্তার বলেছে—

অখিল। ডাক্তার আরো একবার বলেছিল কিনা, এবার তারা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। বাড়ি বন্ধক রেখে বাড়ি তৈরি করা, যতীনের এ কী রকম বুদ্ধি হল।

মাসি। ওর দোষ নেই, দোষ নেই, ওর বুদ্ধির জায়গায় মণি বসেছে শনি হয়ে। ভেবেছিল ওর মণিকে, ওর ঐ আলেয়ার আলোকে, ইঁটের বেড়া দিয়ে ধরে রাখবে।

অখিল। ওর তো নগদ টাকা কিছু ছিল।

মাসি। সমস্তই পাটের ব্যাবসায় ফেলেছে।

অখিল। যতীনের পাটের ব্যাবসা! কলম দিয়ে লাঙল-চাষ। হাসব না কাঁদব?

মাসি। অসাধ্যরকম খরচ করতে বসেছিল, ভেবেছিল পাট বেচাকেনা করে তাড়াতাড়ি মুনফা হবে। আকাশ থেকে মাছি কেমন করে ঘায়ের খবর পায়, সর্বনাশের একটু গন্ধ পেলেই কোথা থেকে সব কুমন্ত্রী এসে জোটে।

অখিল। সর্বনাশ! এখন বাজার এমন যে খেতের পাট চাষীদের কাটবার খরচ পোষাচ্ছে না।