গৃহপ্রবেশ

মাসি। থাক্‌ থাক্‌, আর বলিস নে। ভাববারও আর দরকার নেই— দিন ফুরিয়ে এল।

অখিল। কাকি, পাওনাদার বোধ হয় ওর পাটের ব্যাবসার খবর পেয়েছে— বুঝেছে অনেক শকুনি জমবে, তাই তাড়াতাড়ি নিজের পাওনা আদায় করবার জোগাড় করছে।

মাসি। ওরে অখিল, এ ক’টা দিন সবুর করতে বল— যমদূতের সঙ্গে আদালতের পেয়াদা যেন পাল্লা দিতে না আসে। নাহয় নিয়ে চল আমাকে তোর মক্কেলের কাছে। আমি বামুনের মেয়ে তার পায়ে মাথা খুঁড়ে আসিগে।

অখিল। আচ্ছা, তাদের সঙ্গে একবার কথা কয়ে দেখি যদি দরকার হয় তোমাকে হয়তো যেতে হবে। একবার যতীনের সঙ্গে দেখা করে যাই।

মাসি। না, তোকে দেখলেই ওর ব্যাবসার কথা মনে পড়ে যাবে।

অখিল। আচ্ছা, ও-যে মণির নামে অনেক টাকা লাইফ ইনস্যোর করেছিল, তার কী হল।

মাসি। সে আমি যেমন করে হোক টিকিয়ে রেখেছি। আমার যা-কিছু ছিল তাতেই তো গেল, আর এই ডাক্তার-খরচে। যতীনকে তো বাঁচাতে পারব না, যতীনের এই দানটিকে বাঁচাতে পারলুম, আমার মনে এই সুখ থাকবে। মনে তো আছে, মাঝে মাঝে ইনস্যোরের মাশুল যখন তাকে জোগাতে হত তখন সে কী হাঙ্গাম। দোহাই অখিল, তোর মক্কেলকে বলে—

অখিল। দেখো কাকি, আমি সত্যি কথা বলি, ওর ’পরে আমার একটুও দয়া হয় না। এতবড়ো বাদশাই বোকামি—

মাসি। কিন্তু ওর ’পরে ভগবানের দয়া কত একবার দেখ। সমস্ত প্রাণ দিয়ে ও এই বাড়িটি তৈরি করতে বসেছিল, শেষ হল না বটে, কিন্তু ওর খেলার সাথি ভাঙা খেলনা কুড়িয়ে নিয়ে ওকে সঙ্গে নিয়েই যাচ্ছেন। আর কোন্‌ খেলায় নিমন্ত্রণ পড়েছে কে জানে।

অখিল। কাকি, আমাদের আইনের বইয়ে ভাগ্যে তোমাদের এই খেলার কথাটা কোথাও লেখে নি। তাই অন্ন করে দুটো খেতে পাচ্ছি নইলে ঐরকমই খেয়ালের হাওয়ায় একেবারে দেউলের ঘাটে গিয়ে মরতুম।

[ প্রস্থান
মণির প্রবেশ

মাসি। বউ, তোমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু খবর এসেছে নাকি? তোমার জ্যাঠ্‌তত ভাই অনাথকে দেখলুম।

মণি। হাঁ, মা বলে পাঠিয়েছেন আসছে শুক্রবারে আমার ছোটো বোনের অন্নপ্রাশন। তাই ভাবছি—

মাসি। বেশ তো বাছা, একগাছি সোনার হার পাঠিয়ে দাও, তোমার মা খুশি হবেন।

মণি। ভাবছি, আমি যাব। আমার ছোটো বোনকে তো দেখি নি, দেখতে ইচ্ছে করে।

মাসি। ওমা, সে কী কথা। যতীনকে একলা ফেলে যাবে?

মণি। ফিরতে আমার খুব বেশি দেরি হবে না।

মাসি। খুব বেশি দেরি হবে কি না তা কে বলতে পারে, মা। সময় কি আমাদের হাতে। চোখের এক পলকে দেরি হয়ে যায়।

মণি। তিন ভাইয়ের পরে বড়ো আদরের মেয়ে, ধুম করে অন্নপ্রাশন হবে। আমি না গেলে মা ভারি—

মাসি। তোমার মায়ের ভাব, বাছা, বুঝতে পারি নে— কান্নার সাত সমুদ্রে ঘেরা যাদের প্রাণ, তোমার মাও তো সেই মায়েরই জাত, তবু তিনি মানুষের এতবড়ো ব্যথা বোঝেন না, ঘন ঘন কেবলই তোমাকে ডেকে ডেকে নিয়ে যান-

মণি। দেখো মাসি, তুমি আমার মাকে খোঁটা দিয়ে কথা কোয়ো না বলছি। তবু যদি আপন শাশুড়ি হতে, তা হলেও নয় সহ্য করতুম, কিন্তু—