শোধবোধ

মন্মথ। যে কথা বলতে জিব আটকে যাওয়া উচিত ছিল, সে কথা তুমিই বলেছ।

বিধুমুখী। কী বলেছি।

মন্মথ। সেই চাবি-চুরির মিথ্যে গল্প।

বিধুমুখী। বেশ করেছি। নিজের ছেলের জন্যে বলেছি — তার বাপের হাত থেকে তার প্রাণ বাঁচাবার জন্যে বলেছি।

মন্মথ। প্রাণ বাঁচালেই কি বাঁচানো হল।

বিধুমুখী। অনেক হয়েছে; আর ধর্ম-উপদেশ শুনতে চাই নে। এখন ছেলের উপর কোন্‌ জল্লাদি করতে চাও, খোলসা করে বলো।

মন্মথ। পুলিসে খবর দেব।

বিধুমুখী। দাও-না। চাবি আমার হাতে ছিল, আমিই তো চুরি করে ওকে দিয়েছি। যাক আমাকে নিয়ে জেলে, সেখানে আমি সুখে থাকব। অনেক সুখে, এর চেয়ে অনেক সুখে; মনে হবে স্বর্গে গেছি।

মন্মথ। দরকার নেই; তোমাদের কোথাও যেতে হবে না, অনেকদিন আগেই যার যাওয়া উচিত ছিল, সে-ই একলা যাবে।

[ প্রস্থান
শশধরের প্রবেশ

শশধর। আমাকে এ-বাড়িতে দেখলে মন্মথ ভয় পায়। ভাবে কালো কোর্তা ফরমাশ দেবার জন্য ফিতা হাতে তার ছেলের গায়ের মাপ নিতে এসেছি। ওর আবার বুকের ব্যামো, ভয় হয় পাছে আমাদের কথায় উত্তেজিত হয়ে ওর বিপদ ঘটে। যা হোক, আজ এ ব্যাপারটা কী হল। তুমি বললে চাবি-চুরি, যে-রকমটা দেখা যাচ্ছে তাতে কথাটা —

বিধুমুখী। সবই তো শুনেছ। বলতে গেলে সতীশেরই জিনিস, ওরই আপন প্রপিতামহের। আজ বাদে কাল ওরই হাতে আসত, সেইটে নিয়েছে বলেই—

শশধর। তা যা বল বউ, কাজটা ভালো হয় নি, ওটা চুরিই বটে।

বিধুমুখী। তাই যদি হয়, তবে প্রপিতামহের দান সতীশকে নিতে না দিয়ে উনি সেটা তালাবন্ধ করে রেখেছেন, সেও কি চুরি নয়। এ-গুড়গুড়ি কি ওঁর আপন উপার্জনের টাকায়।

সতীশের প্রবেশ

শশধর। কী সতীশ, খরচপত্র বিবেচনা করে কর না, এখন কী মুশকিলে পড়েছ দেখো দেখি।

সতীশ। মুশকিল তো কিছুই দেখি নে।

শশধর। তবে হাতে কিছু আছে বুঝি? ফাঁস কর নি।

সতীশ। কিছু তো আছেই।

শশধর। কত।

সতীশ। আফিম কেনবার মতো।

বিধু। (কাঁদিয়া উঠিয়া) সতীশ, ও কী কথা তুই বলিস, আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি, আমাকে আর দগ্ধাস্‌ নে।

শশধর। ছি ছি, সতীশ। এমন কথা যদি বা কখনো মনেও আসে, তবু কি মার সামনে উচ্চারণ করা যায়। বড়ো অন্যায় কথা।

সতীশ। (জনান্তিকে) মা, তোমাকেও বলে রাখি, আমি যেমন করে পারি সেই নেক্‌‍লেসটা ফিরিয়ে এনে বাবার গুড়গুড়ি উদ্ধার