প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিধুমুখী। দিদি, সতীশকে রক্ষা করো। ও কোন্ দিন কী করে বসে। আমি তো ভয়ে বাঁচি নে। ও যা বলে, শুনে আমার গা কাঁপে।
সুকুমারী। কী সর্বনাশ! সতীশ, আমার গা ছুঁয়ে বল্, এমন-সব কথা মনেও আনবি নে। চুপ করে রইলি যে? লক্ষ্মী বাপ আমার। তোর মা-মাসির কথা মনে করিস।
সতীশ। জেলে বসে মনে করার চেয়ে এ-সমস্ত হাস্যকর ব্যাপার জেলের বাইরে চুকিয়ে ফেলাই ভালো।
সুকুমারী। আমরা থাকতে তোকে জেলে কে নিয়ে যাবে।
সতীশ। পেয়াদা।
সুকুমারী। আচ্ছা, সে দেখব কত বড়ো পেয়াদা; ওগো, এই টাকাটা ফেলে দাও-না, ছেলেমানুষকে কেন কষ্ট দেওয়া।
শশধর। টাকা ফেলে দিতে পারি, কিন্তু মন্মথ আমার মাথায় ইঁট ফেলে না মারে।
সতীশ। মেসোমশাই, সে-ইঁট তোমার মাথায় পৌঁছবে না, আমার ঘাড়ে পড়বে। একে এক্জামিনে ফেল করেছি, তার উপর দেনা; এর উপরে জেলে যাবার এতবড়ো সুযোগটা যদি মাটি হয়ে যায়, তবে বাবা আমার সে-অপরাধ মাপ করবেন না।
বিধুমুখী। সত্যি দিদি। সতীশ মেসোর টাকা নিয়েছে শুনলে তিনি বোধ হয় ওকে বাড়ি থেকে বার করে দেবেন।
সুকুমারী। তা দিন-না। আর কি কোথাও বাড়ি নেই নাকি। ও বিধু, সতীশকে তুই আমাকেই দিয়ে দে-না। আমার তো ছেলেপুলে নেই, আমিই নাহয় ওকে মানুষ করি? কী বলো গো।
শশধর। সে তো ভালোই। কিন্তু সতীশ যে বাঘের বাচ্ছা, ওকে টানতে গেলে তার মুখ থেকে প্রাণ বাঁচানো দায় হবে।
সুকুমারী। বাঘমশায় তো বাচ্ছাটিকে জেলের পেয়াদার হাতেই সমর্পণ করে দিয়েছেন, আমরা যদি তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাই, এখন তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না।
শশধর। বাঘিনী কী বলেন; বাচ্ছাই বা কী বলে।
সুকুমারী। যা বলে আমি জানি, সে কথা আর জিজ্ঞাসা করতে হবে না। তুমি এখন দেনাটা শোধ করে দাও।
বিধুমুখী। দিদি!
সুকুমারী। আর দিদি দিদি করে কাঁদতে হবে না। চল্ তোর চুল বেঁধে দিই-গে। এমন ছিরি করে তোর ভগ্নীপতির সামনে বার হতে লজ্জা করে না?
শশধর। মন্মথ, ভাই তুমি একটু বিবেচনা করে দেখো—
মন্মথ। বিবেচনা না করে তা আমি কিছুই করি না।
শশধর। তবে দোহাই তোমার, বিবেচনা একটু খাটো করো। ছেলেটাকে কি জেলে দেবে। তাতে কি ওর ভালো হবে।
মন্মথ। তা জানি নে, কিন্তু যার যেটা প্রাপ্য, সে তাকে পেতেই হবে।
শশধর। প্রাপ্যের চেয়েও বড়ো জিনিস আছে,তার ’পরেও মানুষের দাবি থাকা অন্যায় নয়।