শোধবোধ

নলিনী। নেক্‌‌‌‌‌‌‍লেস এক রকম করে ছাড়া আর করকম করে দেখা যায়? কথা উঠতে না উঠতেই আগে থাকতেই তুমি যেন—

সতীশ। আচ্ছা, তা বলো, কী বলছিলে বলো।

নলিনী। কিচ্ছু না, খুব সাদা কথা, অমন দামি জিনিস আমাকে কেন দিলে।

সতীশ। আচ্ছা বেশ, তা হলে আমাকে ফিরিয়ে দাও।

নলিনী। ঐ দেখো, আবার অভিমান।

সতীশ। আমার মতো অবস্থার লোকের অভিমান কিসের। দাও তবে ফিরিয়েই দাও।

নলিনী। অমন সুর কর যদি তোমার সঙ্গে মন খুলে কথা কওয়াই শক্ত হয়। একটু শান্ত হয়ে শোনো আমার কথা। মিস্টার নন্দী আমাকে নির্বোধের মতো একটা দামি ব্রেস্‌‌‍লেট পাঠিয়েছিলেন, তুমি অমনি নির্‌বুদ্ধিতার সুর চড়িয়ে তার চেয়ে দামি একটা নেক্‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‍লেস পাঠাতে গেলে কেন।

সতীশ। সেটা বোঝবার শক্তি থাকলেই তো মানুষের কোনো মুশকিল ঘটে না। যে-অবস্থায় লোকের বিবেচনাশক্তি থাকে না সে-অবস্থাটা তোমার একেবারে জানা নেই বলে তুমি রাগ কর, নেলি।

নলিনী। আমার সাত জন্মে জেনে কাজ নেই। কিন্তু ও-নেক্‌‌‍লেস তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সতীশ। ফিরে দেবে?

নলিনী। দেব। বাহাদুরি দেখাবার জন্য যে-দান, আমার কাছে সে-দানের মূল্য নেই।

সতীশ। বাহাদুরি দেখাবার জন্যে! এমন কথা তুমি বললে? অন্যায় বলছ, নেলি।

নলিনী। আমি কিছুই অন্যায় বলছি নে — তুমি যদি আমাকে একটি ফুল দিতে আমি ঢের বেশি খুশি হতেম। তুমি যখন-তখন প্রায়ই মাঝে মাঝে আমাকে কিছু-না-কিছু দামি জিনিস পাঠাতে আরম্ভ করেছ। পাছে তোমার মনে লাগে বলে আমি এতদিন কিছু বলি নি। কিন্তু ক্রমেই মাত্রা বেড়ে চলেছে, আর আমার চুপ করে থাকা উচিত নয়। এই নাও তোমার নেক্‌‍লেস।

সতীশ। আচ্ছা, তবে নিলুম।

হাতে লইয়া অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করিয়া ধুলায় ফেলিয়া দিল

নলিনী। ও কি হল।

সতীশ। ভেবেছিলুম ওর দাম আছে, ওর কোনো দাম নেই।

নলিনী। (তুলিয়া লইয়া) তুমি রাগই কর আর যাই কর, আমার যা বলবার তোমাকে বলবই। আমি তো তোমাকে ছেলেবেলা থেকেই জানি, আমার কাছে ভাঁড়িয়ো না। সত্য করে বলো, তোমার কি অনেক টাকা ধার হয় নি।

সতীশ। (চমকিয়া উঠিয়া) কে বললে ধার হয়েছে। কে বললে তোমাকে। একজন কেউ আছে, সে লাগালাগি করছে। তার নাম বলো; আমি তাকে—

নলিনী। আজ তোমার কী হয়েছে বলো তো।

সতীশ। বলতেই হবে তোমাকে কে বলেছে আমার ধারের কথা। আমি তাকে দেখে নিতে চাই।

নলিনী। কেউ বলে নি। আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারি। আমার জন্য তুমি এমন অন্যায় কেন করছ।

সতীশ। সময়বিশেষে লোকবিশেষের জন্যে মানুষ প্রাণ দিতে ইচ্ছে করে; আজকালকার দিনে প্রাণ দেবার ভদ্র উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না — অন্তত ধার করার দুঃখটুকু স্বীকার করবার যে-সুখ তাও কি ভোগ করতে দেবে না। আমার পক্ষে যা মৃত্যুর