প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নলিনী। আচ্ছা, তোমার যা করবার তা তো করেছ — তোমার সেই ত্যাগ-স্বীকারটুকু আমি নিলেম — এখন এ-জিনিসটা ফিরে নাও।
সতীশ। তবে দাও, তাই দাও। যদি আমার অন্তরের কথাটা বুঝে থাক, তা হলে —
নলিনী। থাক্ থাক্, অন্তরের কথা অন্দরমহলেই থাক্। নেক্লেসটা এই নিয়ে যাও।
সতীশ। (হাতে লইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া) সেই ভালো, তবে যাই। (কিছু দূর গিয়া ফিরিয়া আসিয়া) দয়া করো নেলি, দয়া করো — যদি আমাকে ফিরিয়ে নিতে হয়, তবে ওটা গলায় ফাঁস লাগিয়ে দম বন্ধ করে আমার পক্ষে মরা ভালো।
নলিনী। দেনা তুমি শোধ করবে কী করে।
সতীশ। মার কাছ থেকে টাকা পাব।
নলিনী। ছি ছি, তিনি মনে করবেন, আমার জন্যই তাঁর ছেলের দেনা হচ্ছে। সতীশ, তোমার এই নেক্লেসটা হাতে করে নেওয়ার চেয়ে ঢের বেশি করে নিয়েছি, এই কথাটা তোমাকে বুঝে দেখতে হবে। নইলে কখনোই তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারতুম না। দিলে অপমান করা হত। বুঝতে পারছ?
সতীশ। সম্পূর্ণ না।
নলিনী। তোমার দান-করাকেই আমি বেশি মান দিয়েছি বলেই তোমার দানের জিনিসকে অনায়াসে ত্যাগ করতে পারি। মনে করো না, এটা হারিয়ে গেছে; সেই হারানোতে তোমার দান তো একটুও হারায় না।
সতীশ। ঠিক বলছ, নেলি?
নলিনী। ঠিক বলছি। আমি যেমন সহজে এটি তোমার হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছি, তেমনি সহজে তুমি এটি আমার হাত থেকে ফিরে নাও। তা হলে আমি ভারি খুশি হব।
সতীশ। খুশি হবে? তবে দাও। (নেক্লেস লইয়া) কিন্তু যে-হাত দিয়ে তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিলে, সেই হাতেই তুমি আর-একজনের ব্রেস্লেট পরেছ, সে যেন আমাকে —
নলিনী। ওতে কন্যার হাত নেই সতীশ, আছে কন্যাকর্তার হাত। বাবা বিশেষ করে বলেছিলেন, আজ —
সতীশ। আচ্ছা, ঐ ব্রেস্লেট চিরদিনই তোমার হাতে থাক্— এই নেক্লেস কেবল কিছুক্ষণের জন্যে গলায় পরো, তার পরে আমি নিয়ে যাব।
নলিনী। পরলে বাবা রাগ করবেন।
সতীশ। কেন।
নলিনী। তা হলে এই ব্রেস্লেট পরার দাম কমে যাবে — ফের মুখ গম্ভীর করছ?
সতীশ। কথাটা কি খুব প্রফুল্ল হবার মতো।
নলিনী। নয় তো কী। তোমার কাছে যে আমি এত খুলে কথা বলি, তার কোনো দাম নেই? অকৃতজ্ঞ! মিস্টার নন্দীর সঙ্গে আমি এমন করে কইতে পারতুম? এবার কিন্তু টেনিস্কোর্ট্ থেকে যাও।
সতীশ। কেন যেতে বলছ, নেলি। এখানে আমাকে মানায় না?
নলিনী। না, মানায় না।