প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
[ প্রস্থান
বিনোদ। বুড়োও তো কম একগুঁয়ে নয় দেখছি। যা হোক এ পর্যন্ত রানীকে কিছু বলে নি বোধ হয়।
চন্দ্রকান্তের প্রবেশ
বিনোদ। কী হে চন্দর! তুমি এখানে যে!
চন্দ্রকান্ত। নিবারণবাবু এই বাড়িতে কী কাজে এসেছেন শুনলুম। আজ তাঁরই ওখানে আমার খাওয়ার পালা পড়েছে, বুড়ো ভুলে গেছেন কি না খবর নিতে এসেছি। খিদে পেয়েছে। তুমিও বুঝি নিবারণবাবুর খোঁজে এখানে এসেছ?
বিনোদ। সে কথা পরে হবে। কিন্তু, তুমি পালা করে খাচ্ছ, তার মানে তো বুঝতে পারছি নে চন্দরদা!
চন্দ্রকান্ত। আর ভাই, মহা বিপদে পড়েছি।
বিনোদ। কেন, কী হয়েছে?
চন্দ্রকান্ত। কী জানি ভাই, কখন তোদের সাক্ষাতে কথায় কথায় কী কতকগুলো মিছে কথা বলেছিলুম, তাই শুনে ব্রাহ্মণী বাপের বাড়ি এমনি গা-ঢাকা হয়েছেন যে, কিছুতেই তাঁর আর নাগাল পাচ্ছি নে।
বিনোদ। বলো কী দাদা! তোমার বাড়িতে তো এ দন্ডবিধি পূর্বে প্রচলিত ছিল না।
চন্দ্রকান্ত। না ভাই, কালক্রমে কতই যে হচ্ছে, কিছু বুঝতে পারছি নে।
বিনোদ। এখন তা হলে তোমার ছুটি চলছে বলো। জীবনে এই বোধ হয় ডোমেস্টিক সার্ভিসে তোমার প্রথম ফার্লো।
চন্দ্রকান্ত। হাঁ রে, কিন্তু উইদাউট পে। বিনু, আমার দুঃখ তোরা বুঝতেই পারবি নে। তুই সেদিন বলছিলি, বিয়ে না করটাই তোর মুখস্থ হয়ে গেছে। আমার ঠিক তার উলটো। ঐ স্ত্রীটিকে এমনই বিশ্রী অভ্যেস করে ফেলেছি যে, হঠাৎ বুকের হাড়-কখানা খসে গেলে যেমন একদম খালি ঠেকে, ঐ স্ত্রীটি আড়াল হলেই তেমনি জগৎ টা যেন ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়।
বিনোদ। এখন উপায় কী?
চন্দ্রকান্ত। মনে করছি, আমি উলটে রাগ করব। আমিও ঘর ছেড়ে তোর এখানেই থাকব। আমার বন্ধুদের মধ্যে তোকেই সে সবচেয়ে বেশি ভয় করে। তার বিশ্বাস, তুই আমার মাথাটি খেয়েছিস!
বিনোদ। তা বেশ কথা। কিন্তু আমাকে যে আবার শ্বশুরবাড়ি যেতে হচ্ছে।
চন্দ্রকান্ত। কার শ্বশুরবাড়ি?
বিনোদ। আমার নিজের, আবার কার।
চন্দ্রকান্ত। ( সানন্দে বিনুর পিঠে চপেটাঘাত করিয়া) সত্যি বলছিস বিনু?
বিনোদ। স্ত্রীকে আনতে চলেছি, নিতান্ত লক্ষ্মীছাড়ার মতো থাকতে আর ইচ্ছে করছে না।
চন্দ্রকান্ত। কিন্তু, এতদিন তোর এ আক্কেল ছিল কোথায়? যতকাল আমার সংসর্গে ছিলি এমন সব সৎ সংকল্পের প্রসঙ্গ তো শুনতে পাই নি, দুদিন আমার দেখা পাস নি আর তোর ধর্মবুদ্ধি এতদূর পরিষ্কার হয়ে এল?
বিনোদ। কিন্তু, চন্দরদা, বিপদ কী হয়েছে জান? নিবারণবাবুর যে-রকম মেজাজ দেখলুম, সহজে কমলকে আমার কাছে পাঠাতে রাজি হবেন না। তুমি তো তাঁর ওখানে খেতে যাচ্ছ, আমার হয়ে একটু ওকালতি করতে হবে।
চন্দ্রকান্ত। নিশ্চয় করব। কিন্তু, ওরা যে বললে নিবারণবাবু এখানে এসেছেন।