প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ওদের এখনি শান্ত হতে বলো।
তা হলে মহারাজ, শ্রুতিভূষণকে ওদের কাছে পাঠিয়ে দিন-না — আমরা ততক্ষণ যুদ্ধের পরামর্শটা —
না না, যুদ্ধ পরে হবে, শ্রুতিভূষণকে ছাড়তে পারছি নে।
মহারাজ, স্বর্ণমুদ্রা দেবার কথা বলছিলেন কিন্তু সে দান যে ক্ষয় হয়ে যাবে। বৈরাগ্যবারিধি লিখছেন —
স্বর্ণদান করে যেই করে দুঃখ দান,
যত স্বর্ণ ক্ষয় হয় ব্যথা পায় প্রাণ।
শত দাও, লক্ষ দাও, হয়ে যায় শেষ,
শূন্য ভাণ্ড ভরি শুধু থাকে মনঃক্লেশ।
আহা শরীর রোমাঞ্চিত হল। প্রভু কি তা হলে —
না, আমি সহস্র মুদ্রা চাই নে।
দিন দিন, একটু পদধূলি দিন। সহস্র মুদ্রা চান না! এতবড়ো কথা!
মহারাজ, এই সহস্র মুদ্রা অক্ষয় হয়ে যাতে মহারাজের পুণ্যফলকে অসীম করে আমি এমন-কিছু চাই। গোধনসমেত আপনার ঐ কাঞ্চনপুর জনপদটি যদি ব্রহ্মত্র দান করেন কেবলমাত্র ঐটুকুতেই আমি সন্তুষ্ট থাকব ; কারণ বৈরাগ্যবারিধি বলছেন –
বুঝেছি শ্রুতিভূষণ, এর জন্যে আর বৈরাগ্যবারিধির প্রমাণ দরকার নেই। মন্ত্রী, কাঞ্চনপুর জনপদটি শ্রুতিভূষণের বংশে চিরন্তন — আবার কী, বার বার কেন চীৎকার করছে।
চীৎকারটা বার বার করছে বটে কিন্তু কারণটা একই রয়ে গেছে। ওরা সেই মহারাজের দুর্ভিক্ষকাতর প্রজা।
মহারাজ, ব্রাহ্মণী মহারাজকে বলতে বলেছেন তিনি তাঁর সর্বাঙ্গে মহারাজের যশোঝংকার ধ্বনিত করতে চান কিন্তু আভরণের অভাববশত শব্দ বড়োই ক্ষীণ হয়ে বাজছে।
মন্ত্রী!
মহারাজ!
ব্রাক্ষ্মণীর আভরণের অভাবমোচন করতে যেন বিলম্ব না হয়।
আর মন্ত্রীমশায়কে বলে দিন, আমরা সর্বদাই পরমার্থচিন্তায় রত, বৎসরে বৎসরে গৃহসংস্কারের চিন্তায় মন দিতে হলে চিত্তবিক্ষেপ হয়। অতএব রাজশিল্পী যদি আমার গৃহটি সুদৃঢ় করে নির্মাণ করে দেয় তা হলে তার তলদেশে শান্তমনে বৈরাগ্যসাধন করতে পারি।
মন্ত্রী, রাজশিল্পীকে যথাবিধি আদেশ করে দাও।
মহারাজ, এ বৎসর রাজকোষে ধনাভাব।
সে তো প্রতি বৎসরেই শুনে আসছি। মন্ত্রী, তোমাদের উপর ভার ধন বৃদ্ধি করবার, আর আমার উপর ভার অভাব বৃদ্ধি করবার। এই দুইয়ে মিলে সন্ধি করে হয় ধনাভাব।
মহারাজ, মন্ত্রীকে দোষ দিতে পারি নে। উনি দেখছেন আপনার অর্থ, আর আমরা দেখছি আপনার পরমার্থ, সুতরাং উনি যেখানে দেখতে পাচ্ছেন, অভাব আমরা সেখানে দেখতে পাচ্ছি ধন। বৈরাগ্যবারিধিতে লিখছেন -
রাজকোষ পূর্ণ হয়ে তবু শূন্যমাত্র,