শেষরক্ষা

ইন্দু। গদাই! — ছি ছি, এ কথা আমি আগে জানতে পারলুম না কেন!

গদাই। তা হলে চাকরি কি দিতেন না? এখন কী আদেশ করেন?

ইন্দু। আমি আদেশ করছি, ভবিষ্যতে যখন কবিতা লিখবেন কাদম্বিনীর পরিবর্তে ইন্দুমতী নামটি ব্যবহার করবেন আর ছন্দ মিলিয়ে লিখবেন।

গদাই। দুটোই যে আমার পক্ষে সমান অসাধ্য।

ইন্দু। আচ্ছা, ছন্দ মেলাবার ভার আমি নিজেই নেব এখন, নামটা আপনি বদলে নেবেন —

গদাই। এমন নিষ্ঠুর আদেশ কেন করছেন? চোদ্দটা অক্ষরের জায়গায় সতেরোটা বসানো কি এমনি গুরুতর অপরাধ যে সেজন্যে ভৃত্যকে একেবারে —

ইন্দু। না, সে অপরাধ আমি সহস্রবার মার্জনা করতে পারি, কিন্তু ইন্দুমতীকে কাদম্বিনী বলে ভুল করলে আমার সহ্য হবে না —

গদাই। আপনার নাম তবে —

ইন্দু। ইন্দুমতী।

গদাই। হায় হায়, এতদিন কী ভুলটাই করেছি! বাগবাজারের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি, বাবা আমাকে উঠতে বসতে দু-বেলা বাপান্ত করেছেন, তার উপরে কাদম্বিনী নামটা ছন্দের ভিতর পুরতে মাথা-ভাঙাভাঙি করতে হয়েছে। —

(মৃদুস্বরে)                               যেমনি আমায় ইন্দু প্রথম দেখিলে

কেমন করে চকোর বলে তখনি চিনিলে —

কিংবা

কেমন করে চাকর বলে তখনি চিনিলে —

আহা, সে কেমন হত!

ইন্দু। তবে এখন ভ্রমসংশোধন করুন — এই নিন আপনার খাতা। আমি চললুম।

[ প্রস্থান

গদাই। ( উচ্চস্বরে) শুনে যান, আপনারও বোধ হচ্ছে যেন একটা ভ্রম হয়েছিল — সেটাও অনুগ্রহ করে সংশোধন করে নেবেন — সুবিধে আছে, আপনাকে সেইসঙ্গে ছন্দ বদলাতে হবে না। — হায় রে, সেই মোজার কবিতাটা যে অপরাধের বোঝা হয়ে আমার অ্যানাটমির নোট-বইটা চেপে রইল। মেজর অপারেশন করলেও যে ওটাকে ছাঁটা যাবে না। আর সেই রিফু-করা মোজা ক-জোড়া। আজও যে প্রাণ ধরে সেগুলো ফিরিয়ে দিতে পারি নি। তার উপরে সেদিন থেকে ভরু ফুলুরিওয়ালার তেলে-ভাজা বেগ্‌নি খেয়ে খেয়ে অমলশূল হবার জো হল। ঠাকুরদাসীকে খুঁজে বের করতে হবে। সে বুড়িটাকে — ইচ্ছে করছে — থাক্‌, সে আর বলে কাজ নেই।

 

নিবারণের প্রবেশ

 

নিবারণ। দেখো বাপু, শিবু আমার বাল্যকালের বন্ধু — আমার বড়ো ইচ্ছে, তাঁর সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক বন্ধন হয়। এখন তোমাদের ইচ্ছের উপরেই সমস্ত নির্ভর করছে।