প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
গদাই। আমার ইচ্ছের জন্যে আপনি কিছু ভাববেন না, আপনার আদেশ পেলেই আমি কৃতার্থ হই।
নিবারণ। ( স্বগত) যা মনে করেছিলুম তাই। বুড়ো বাপ মাথা খোঁড়াখুঁড়ি করে যা করতে না পারলে, একবার ইন্দুকে দেখবামাত্র সমস্ত ঠিক হয়ে গেল। বুড়োরাই শাস্ত্র মেনে চলে, যুবাদের শাস্ত্রই আলাদা। ( প্রকাশ্যে) তা বাপু, তোমার কথা শুনে বড়ো আনন্দ হল। তা হলে একবার আমার মেয়েকে তার মতটা জিজ্ঞাসা করে আসি। তোমরা শিক্ষিত লোক, বুঝতেই পার, বয়ঃপ্রাপ্ত মেয়ে, তার সম্মতি না নিয়ে তাকে বিবাহ দেওয়া যায় না।
গদাই। তা অবশ্য।
নিবারণ। তা হলে আমি একবার আসি। চন্দ্রবাবুদের এই ঘরে ডেকে দিয়ে যাই।
[ প্রস্থান
শিবচরণের প্রবেশ
শিবচরণ। তুই এখানে বসে রয়েছিস, আমি তোকে পৃথিবী-সুদ্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছি।
গদাই। কেন বাবা?
শিবচরণ। তোকে যে আজ তারা দেখতে আসবে।
গদাই। কারা?
শিবচরণ। বাগবাজারের চৌধুরীরা।
গদাই। কেন!
শিবচরণ। কেন! না দেখে-শুনে অমনি ফস করে বিয়ে হয়ে যাবে? তোর বুঝি আর সবুর সইছে না?
গদাই। বিয়ে কার সঙ্গে হবে?
শিবচরণ। ভয় নেই রে বাপু, তুই যাকে চাস তারই সঙ্গে হবে। আমার ছেলে হয়ে তুই যে এত টাকা চিনেছিস, তা তো জানতুম না। তা সেই বাগবাজারের ট্যাকশালের সঙ্গেই তোর বিয়ে স্থির করে এসেছি।
গদাই। সে কি বাবা! আপনার মতের বিরুদ্ধে আমি বিয়ে করতে চাই নে — বিশেষ আপনি নিবারণবাবুকে কথা দিয়েছেন—
শিবচরণ। ( অনেকক্ষণ হাঁ করিয়া গদাইয়ের মুখের দিকে নিরীক্ষণ) তুই খেপেছিস না আমি খেপেছি, আমাকে কে বুঝিয়ে দেবে! কথাটা একটু পরিষ্কার করে বল্, আমি ভালো করে বুঝি।
গদাই। আমি সেই চৌধুরীদের মেয়ে বিয়ে করব না।
শিবচরণ। চৌধুরীদের মেয়ে বিয়ে করবি নে! তবে কাকে করবি?
গদাই। নিবারণবাবুর মেয়ে ইন্দুমতীকে।
শিবচরণ। ( উচ্চস্বরে) কী! হতভাগা পাজি লক্ষ্মীছাড়া বেটা! যখন ইন্দুমতীর সঙ্গে সম্বন্ধ করি তখন বলিস কাদম্বিনীকে বিয়ে করবি আবার যখন কাদম্বিনীর সঙ্গে সম্বন্ধ করি তখন বলিস ইন্দুমতীকে বিয়ে করবি — তুই তোর বুড়ো বাপকে একবার বাগবাজার একবার মির্জাপুর খেপিয়ে নিয়ে, নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতে চাস!
গদাই। আমাকে মাপ করো বাবা, আমার একটা মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছিল —
শিবচরণ। ভুল কী রে বেটা, তোর সেই বাগবাজারে বিয়ে করতেই হবে। তাদের কোনো পুরুষে চিনি নে, আমি নিজে গিয়ে তাদের স্তুতি মিনতি করে এলুম যেন আমারই কন্যাদায় হয়েছে। তার পরে যখন সমস্ত ঠিকঠাক হয়ে গেল, আজ তারা