রাজা ও রানী
মহারাজ আগুন হয়ে কুমারসেনকে পাঁচটা ভর্ৎসনা করে এক দূত পাঠিয়ে দেন। কুমারসেন উদ্ধত যুবাপুরুষ, সহ্য করতে পারবে কেন? বোধ করি সেও দূতকে দু কথা শুনিয়ে দিয়ে থাকবে।

নারায়ণী। তা বেশ তো — কুমারসেন তো রাজার পর নয়, আপনার লোক, তা কথা চলছিল বেশ তাই চলুক। তুমি কাছে না থাকলে রাজার ঘটে কি দুটো কথাও জোগায় না? কথা বন্ধ করে অস্ত্র চালাবার দরকার কী বাপু। ঐ ওতেই তো হার হল।

দেবদত্ত। আসল কথা, একটা যুদ্ধ করবার ছুতো। রাজা এখন কিছুতেই যুদ্ধ ছাড়তে পারছেন না। নানা ছল অন্বেষণ করছেন। রাজাকে সাহস করে দুটো ভালো কথা বলে এমন বন্ধু কেউ নেই। আমি তো আর থাকতে পারছি নে — আমি চললুম।

নারায়ণী। যেতে ইচ্ছে হয় যাও, আমি কিন্তু একলা তোমার ঘরকন্না করতে পারব না। তা আমি বলে রাখলুম। এই রইল, তোমার সমস্ত পড়ে রইল। আমি বিবাগী হয়ে বেরিয়ে যাব।

দেবদত্ত। রোসো, আগে আমি ফিরে আসি তার পর যেয়ো। বল তো আমি থেকে যাই।

নারায়ণী। না না তুমি যাও। আমি কি আর তোমাকে সত্যি থাকতে বলছি? ওগো তুমি চলে গেলে আমি একেবারে বুক ফেটে মরব না, সেজন্যে ভেবো না। আমার বেশ চলে যাবে।

দেবদত্ত। তা কি আর আমি জানি নে? মলয়সমীরণ তোমার কিছু করতে পারবে না। বিরহ তো সামান্য, বজ্রাঘাতেও তোমার কিছু হয় না!

[ প্রস্থানোন্মুখ

নারায়ণী। হে ঠাকুর, রাজাকে সুবৃদ্ধি দাও ঠাকুর! শীঘ্র শীঘ্র ফিরিয়ে আনো।

দেবদত্ত। এ-ঘর ছেড়ে কখনো কোথাও যাই নি। হে ভগবান, এদের সকলের উপর তোমার দৃষ্টি রেখো।

[ প্রস্থান


তৃতীয় দৃশ্য
জালন্ধর
কুমারসেনের শিবির
কুমারসেন ও সুমিত্রা

    সুমিত্রা। ভাই, রাজাকে মার্জনা করো ; করো রোষ

আমার উপরে। আমি মাঝে না থাকিলে

যুদ্ধ করে ‘বীর' নাম করিতে উদ্ধার।

যুদ্ধের আহ্বান শুনে অটল রহিলে

তবু তুমি ; জানি না কি অসম্মানশেল

চিরজীবী মৃত্যু-সম মানীর হৃদয়ে?

আপন ভায়ের হৃদে দুর্ভাগিনী আমি