গৃহপ্রবেশ
কোথায়। তোরই কাছে যেতে হল। তুই এক ফাঁকা মক্কেল খাড়া করে—
হিমির প্রবেশ

হিমি। মাসি, বামুনঠাকরুন এসেছেন।

মাসি। লক্ষ্মী মেয়ে, তুই তাঁকে একটু বসতে বল্‌, আমি এখনই আসছি।

[ হিমির প্রস্থান

অখিল। কাকি, তোমার এই বোনঝির কত বয়স হবে।

মাসি। সতেরো সবে পেরিয়েছে। এই বছরেই আই. এ. দেবে।

অখিল। গলাটি ভারি মিষ্টি, বাইরে থেকে ওঁর গান শুনেছি।

মাসি। ওরা দুই ভাইবোনে একই জাতের। দাদা বাড়ি করছেন, ইনি গান করছেন, দুটোতেই একই সুরের খেলা।

অখিল। বিয়ের সম্বন্ধ—

মাসি। না, ওর দাদার অসুখ হয়ে অবধি সে কথা কাউকে মুখে আনতে দেয় না— পড়াশুনো সব ছেড়ে এইখানেই পড়ে আছে।

অখিল। কিন্তু ভালো পাত্র খুঁজে দিতে পারি কাকি, যদি কখনো—

মাসি। যেমন তুই মক্কেল খুঁজে দিয়েছিলি সেইরকমই, না?

অখিল। না কাকি, ঠাট্টা না— আমি ভাবছি, ওঁকে যদি একটা হার্মোনিয়ম পাঠিয়ে দিই, তাতে কি তোমাদের—

মাসি। কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু ও তো হার্মোনিয়ম ভালোবাসে না।

অখিল। গানের সঙ্গে?

মাসি। গানের সঙ্গে এসরাজ বাজায়।

অখিল। আচ্ছা, তা হলে এসরাজই না-হয়—

মাসি। ওর তো আছে এসরাজ।

অখিল। নাহয় আরো একটা হল। সম্পত্তি বাড়িয়ে তোলাকেই তো বলে শ্রীবৃদ্ধি।

মাসি। আচ্ছা, দিস এসরাজ। এখন আমার কথাটা শোন্‌। এতকাল তোর সেই মক্কেলকে সুদ দিয়ে এসেছি আমারই পৈতৃক গয়না বেচে। মাঝে মাঝে মক্কেল যখনই তিন দিনের মধ্যে শোধ নেবার কড়া দাবি করে চিঠি দিয়েছে, তখনই সুদ চড়িয়ে চড়িয়ে আজ আমার আর কিছু নেই। কাজেই কাকির সম্পত্তি দেওরপোর সিন্ধুকেই গেছে। প্রেতলোকে আমার শ্বশুরের তৃপ্তি হয়েছে— কিন্তু আমার বাবা, যতীনের মা— পরলোকে তাঁদের যদি চোখের জল পড়ে—

হিমির প্রবেশ

হিমি। দাদা তোমাকে বারবার ডাকছেন, মাসি। ছটফট করছেন আর কেবলই বউদিদির কথা জিজ্ঞাসা করছেন। তার জবাব কিছুতে আমার মুখ দিয়ে বেরোয় না, আমার গলা আটকে যায়।

[ দুই হাতে মুখ চাপিয়া কান্না

মাসি। কাঁদিস্‌ নে মা, কাঁদিস নে। আমি যতীনের কাছে যাচ্ছি।

অখিল। কাকি, আমি যদি কিছু করতে পারি, বলো, আমি না-হয় যতীনের কাছে গিয়ে—

মাসি। হাঁ, যতীনের কাছে যেতে হবে। তার সেই উইলটা।

[ প্রস্থান