গৃহপ্রবেশ
রোগীর ঘরে

যতীন। মণি এল না? এত দেরি করলে যে?

মাসি। সে এক কাণ্ড। গিয়ে দেখি তোমার দুধ জ্বাল দিতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে বলে কান্না। বড়োমানুষের ঘরের মেয়ে— দুধ খেতেই জানে, জ্বাল দিতে শেখে নি। তোমার কাজ করতে প্রাণ চায় বলেই করা। অনেক করে ঠাণ্ডা করে তাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে এসেছি। একটু ঘুমোক।

যতীন। মাসি!

মাসি। কী বাবা।

যতীন। বুঝতে পারছি, দিন শেষ হয়ে এল। কিন্তু কোনো খেদ নেই। আমার জন্যে শোক কোরো না।

মাসি। না বাবা, শোক করবার পালা আমার ফুরিয়েছে। ভগবান আমাকে এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছেন যে বেঁচে থাকাই যে ভালো আর মরাই যে মন্দ, তা নয়।

যতীন। মৃত্যুকে আমার মধুর মনে হচ্ছে। আজ আমি ওপারের ঘাটের থেকে সানাই শুনতে পাচ্ছি। হিমি, হিমি কোথায়।

মাসি। ঐ-যে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে।

হিমি। কেন দাদা, কী চাই।

যতীন। লক্ষ্মী বোন আমার, তুই অমন আড়ালে আড়ালে কাঁদিস্‌ নে— তোর চোখের জলের শব্দ আমি যেন বুকের মধ্যে শুনতে পাই। দেখি তোর হাতটা। আমি খুব ভালো আছি। ঐ গানটা গা তো ভাই— যদি হল যাবার ক্ষণ—

হিমির গান

যদি     হল যাবার ক্ষণ

তবে     যাও দিয়ে যাও শেষের পরশন।

বারে বারে যেথায় আপন গানে

স্বপন ভাসাই দূরের পানে,

মাঝে মাঝে দেখে যেয়ো শূন্য বাতায়ন—

    সে মোর      শূন্য বাতায়ন।

মনের প্রান্তে ওই মালতীর লতা

করুণ গন্ধে কয় কী গোপন কথা।

ওরি ডালে আর-শ্রাবণের পাখি

স্মরণখানি আনবে না কি—

আজ-শ্রাবণের সজল ছায়ায় বিরহ মিলন—

আমাদের    বিরহ মিলন।

মাসি। হিমি, বোতলে গরম জল ভরে আন্‌। পায়ে দিতে হবে।

[ হিমির প্রস্থান