প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
যতীন। কষ্ট হচ্ছে মাসি, কিন্তু যত কষ্ট মনে করছ তার কিছুই নয়। আমার সঙ্গে আমার কষ্টের ক্রমেই যেন বিচ্ছেদ হয়ে আসছে। বোঝাই নৌকোর মতো জীবন-জাহাজের সঙ্গে সে ছিল বাঁধা— আজ বাঁধন কাটা পড়েছে, তাকে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমার সঙ্গে সে আর লেগে নেই।— এ তিন দিন মণিকে দিনে রাতে একবারও দেখি নি।
মাসি। বাবা, একটু বেদানার রস খাও, তোমার গলা শুকিয়ে আসছে।
যতীন। আমার উইলটা কাল লেখা হয়ে গেছে— সে কি আমি তোমাকে দেখিয়েছি। ঠিক মনে পড়ছে না।
মাসি। আমার দেখবার দরকার নেই, যতীন।
যতীন। মা যখন মারা যান, আমার তো কিছুই ছিল না। তোমার খেয়ে তোমার হাতেই মানুষ। তাই বলছিলুম—
মাসি। সে আবার কী কথা। আমার তো কেবল এই একখানা বাড়ি আর সামান্য কিছু সম্পত্তি ছিল। বাকি সবই তো তোমার নিজের রোজগার।
যতীন। কিন্তু এই বাড়িটা—
মাসি। কিসের বাড়ি আমার। কত দালান তুমি বাড়িয়েছ, আমার যেটুকু সে তো আর খুঁজেই পাওয়া যায় না।
যতীন। মণি তোমাকে ভিতরে ভিতরে খুব—
মাসি। সে কি জানি নে, যতীন তুই এখন ঘুমো।
যতীন। আমি মণিকে সব লিখে দিলুম বটে, কিন্তু তোমারই রইল। ও তো কখনো তোমাকে অমান্য করবে না।
মাসি। সেজন্যে অত ভাবছ কেন, বাছা।
যতীন। তোমার আশীর্বাদই আমার সব। তুমি আমার উইল দেখে এমন কথা কোনোদিন মনে কোরো না—
মাসি। ও কী কথা, যতীন। তোমার জিনিস তুমি মণিকে দিয়েছ বলে আমি মনে করব— এমন পোড়া মন?
যতীন। কিন্তু তোমাকেও আমি—
মাসি। দেখ্ যতীন, এইবার রাগ করব। তুই চলে যাবি, আর টাকা দিয়ে আমাকে ভুলিয়ে রেখে যাবি?
যতীন। মাসি, টাকার চেয়ে যদি আরো বড়ো কিছু তোমাকে—
মাসি। দিয়েছিস, যতীন, ঢের দিয়েছিস। আমার শূন্য ঘর ভরে ছিলি, এ আমার অনেক জন্মের ভাগ্যি। এতদিন তো বুক ভরে পেয়েছি, আজ আমার পাওনা যদি ফুরিয়ে থাকে তো নালিশ করব না। দাও— লিখে দাও বাড়িঘর, জিনিসপত্র— ঘোড়াগাড়ি, তালুকমুলুক— যা আছে মণির নামে সব লিখে দাও— এ-সব বোঝা আমার সইবে না।
যতীন। তোমার ভোগে রুচি নেই, কিন্তু মণির বয়স অল্প, তাই—
মাসি। ও কথা বলিসনে— ধনসম্পদ দিতে চাস দে, কিন্তু ভোগ করা—
যতীন। কেন ভোগ করবে না, মাসি।
মাসি। না গো না, পারবে না, পারবে না, আমি বলছি, ওর মুখে রুচবে না; গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে—কিছুতে কোনো রস পাবে না।
যতীন। (চুপ করিয়া থাকিয়া, নিশ্বাস ফেলিয়া) দেবার মতো জিনিস তো কিছুই—
মাসি। কম কী দিয়ে যাচ্ছ। ঘরবাড়ি টাকাকড়ির ছল ক’রে যা দিয়ে গেলে তার মূল্য ও কি কোনোদিনই বুঝবে না?
যতীন। মণি কাল কি এসেছিল। আমার পড়ে পড়ছে না।