ভগ্নহৃদয়
উষার কনকস্রোতে প্রতিদিন করিত সে স্নান,
জ্যোছনা-মদিরাধারা পূর্ণিমায় করিত সে পান,
ঘূর্ণ্যমান ঝটিকার মেঘমাঝে বসিয়া একেলা
কৌতুকে দেখিত যত বিদ্যুৎ-বালিকাদের খেলা,
দুরন্ত ঝটিকা হোথা এলোচুলে বেড়াত নাচিয়া
তরঙ্গের শিরে শিরে অধীর চরণ বিক্ষেপিয়া।
হরষে বসিত গিয়া ধূমকেতুপাখার উপরে,
তপনের চারি দিকে ভ্রমিত সে বর্ষ বর্ষ ধরে।
চরাচর মুক্ত তার অবারিত বাসনার কাছে,
প্রকৃতি দেখাত তারে যেথা তার যত ধন আছে;
কুসুমের রেণুমাখা বসন্তের পাখায় চড়িয়া
মুরলা। [স্বগত] হা কবি, ও হৃদয়ের শূন্য পুরাইতে
অভাগিনী মুরলা গো কি না পারে দিতে!
কি সুখী হোতেম, যদি মোর ভালোবাসা
পুরাতে পারিত তব হৃদয়পিপাসা!
শৈশবে ফুটে নি যবে আমার এ মন
তরুণ-প্রভাত-সম, কবি গো, তখন
প্রতিদিন ঢালি ঢালি দিয়েছ শিশির—
প্রতিদিন যোগায়েছ শীতল সমীর!
তোমারি চোখের ’পরে করুণ কিরণে
এ হৃদি উঠেছে ফুটি তোমারি যতনে!
তোমারি চরণে, কবি, দেছি উপহার,
যা কিছু সৌরভ এর তোমারি— তোমার।
[ প্রকাশ্যে ] তোল কবি, মাথা তোল, ভেবো না, এমন—
দুজনে সরসীতীরে করিগে ভ্রমণ।
ওই চেয়ে দেখ, কবি, তটিনীর ধারে
মধ্যাহ্নকিরণ লয়ে বনদেবী স্তব্ধ হয়ে
দিতেছে বিবাহ দিয়া আলোকে আঁধারে।
সাধের সে গান তব শুনিবে এখন?
তবে গাই, মাথা তোল, শোন দিয়ে মন।