প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
জনার্দন। সত্যি না কি ভাই?
দ্বিতীয় পদাতিক। ওই দেখো না নিশেন উড়ছে।
কৌণ্ডিল্য। তাই তো রে, ওটা নিশেনই তো বটে।
দ্বিতীয় পদাতিক। নিশেনে কিংশুক ফুল আঁকা আছে, দেখছ না?
কুম্ভ। ওরে কিংশুক ফুলই তো বটে, মিথ্যে বলে নি — একেবারে টকটক করছে।
প্রথম পদাতিক। তবে! কথাটা যে বড়ো বিশ্বাস হল না!
জনার্দন। না দাদা, আমি তো অবিশ্বাস করি নি। ওই কুম্ভই গোলমাল করেছিল। আমি একটি কথাও বলি নি।
প্রথম পদাতিক। ওটা বোধ হয় শূন্যকুম্ভ, তাই আওয়াজ বেশি।
দ্বিতীয় পদাতিক। লোকটা কে হে? তোমাদের কে হয়?
কৌণ্ডিল্য। কেউ না, কেউ না। আমাদের গ্রামের যে মোড়ল, ও তার খুড়শ্বশুর — অন্য পাড়ায় বাড়ি।
দ্বিতীয় পদাতিক। হাঁ হাঁ, খুড়শ্বশুর গোছের চোহারা বটে, বুদ্ধিটাও নেহাত খুড়শ্বশুরে ধাঁচার।
কুম্ভ। অনেক দুঃখে বুদ্ধিটা এইরকম হয়েছে। এই যে সেদিন কোথা থেকে এক রাজা বেরোল, নামের গোড়ায় তিনশো পঁয়তাল্লিশটা শ্রী লাগিয়ে ঢাক পিটোতে পিটোতে শহর ঘুরে বেড়াল – আমি তার পিছনে কি কম ফিরেছি? কত ভোগ দিলেম কত সেবা করলেম, ভিটেমাটি বিকিয়ে যাবার জো হল। শেষকালে তার রাজাগিরি রইল কোথায়? লোকে যখন তার কাছে তালুক চায়, মুলুক চায় সে তখন পাঁজিপুঁথি খুলে শুভদিন কিছুতেই খুঁজে পায় না। কিন্তু আমাদের কাছে খাজনা নেবার বেলায় মঘা অশ্লেষা ত্র্য’স্পর্শ কিছুই তো বাধত না।
দ্বিতীয় পদাতিক। হাঁ হে কুম্ভ, আমাদের রাজাকে তুমি সেই রকম মেকি রাজা বলতে চাও।
কুম্ভ। না বাবা, রাগ করো না। আমি নাকে খত দিচ্ছি – যতদূর সরতে বল তত দূরই সরে দাঁড়াব।
দ্বিতীয় পদাতিক। আচ্ছা, বেশ এইখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকো। রাজা এলেন বলে – আমরা এগিয়ে গিয়ে রাস্তা ঠিক করে রাখি।
জনার্দন। কুম্ভ, তোমার ওই মুখের দোষেই তুমি মরবে!
কুম্ভ। না ভাই জনার্দন, ও মুখের দোষ নয়, ও কপালের দোষ। যেবারে মিছে রাজা বেরোল একটি কথাও কই নি – অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো নিজের সর্বনাশ করেছি – আর এবার হয়তো-বা সত্যি রাজা বেরিয়েছে, তাই বেফাঁস কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ওটা কপাল।
জনার্দন। আমি এই বুঝি, রাজা সত্যি হউক মিথ্যে হউক, মেনে চলতেই হবে। আমরা কি রাজা চিনি যে বিচার করব। অন্ধকারে ঢেলা মারা – যত বেশি মারবে একটা না একটা লেগে যাবে। আমি তাই একধার থেকে গড় করে যাই – সত্যি হলে লাভ, মিথ্যে হলেই বা লোকসান কী।
কুম্ভ। ঢেলাগুলো নেহাত ঢেলা হলে ভাবনা ছিল না – দামি জিনিস – বাজে খরচ করতে গিয়ে ফতুর হতে হয়।
কৌণ্ডিল্য। ওই যে আসছেন রাজা। আহা রাজার মতন রাজা বটে। কী চেহারা। যেন ননির পুতুল। কেমন হে কুম্ভ, এখন কী মনে হচ্ছে।
কুম্ভ। দেখাচ্ছে ভালো – কী জানি ভাই হতে পারে।