অরূপরতন

কৌণ্ডিল্য। ঠিক যেন রাজাটি গড়ে রেখেছে। ভয় হয়, পাছে রোদ্দুর লাগলে গ’লে যায়।


রাজবেশধারীর প্রবেশ

সকলে। জয় মহারাজের জয়।

জনার্দন। দর্শনের জন্যে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে। দয়া রাখবেন।

কুম্ভ। বড়ো ধাঁধাঁ ঠেকছে, ঠাকুরদাকে ডেকে আনি।

[সকলের প্রস্থান


বিদেশী পথিকদলের প্রবেশ

মাধব। ওরে রাজা রে রাজা। দেখবি আয়।

বিরাজদত্ত। মনে রেখো রাজা, আমি কুশলীবস্তুর উদয়দত্তর নাতি। আমার নাম বিরাজদত্ত। রাজা বেরিয়েছে শুনেই ছুটেছি, লোকের কারও কথায় কান দিই নি – আমি সক্কলের আগে তোমাকে মেনেছি।

ভদ্রসেন। শোনো একবার, আমি যে ভোর থেকে এখানে দাঁড়িয়ে—তখনও কাক ডাকে নি – এতক্ষণ ছিলে কোথায়? রাজা, আমি বিক্রমস্থলীর ভদ্রসেন – ভক্তকে স্মরণ রেখো।

রাজবেশী। তোমাদের ভক্তিতে বড়ো প্রীত হলাম।

বিরাজদত্ত। মহারাজ, আমাদের অভাব বিস্তর – এতদিন দর্শন পাই নি, জানাব কাকে?

রাজবেশী। তোমাদের সমস্ত অভাব মিটিয়ে দেব।

[রাজবেশীর প্রস্থান
দেশী পথিকদের প্রবেশ

কৌণ্ডিল্য। ওরে পিছিয়ে থাকলে চলবে না – ভিড়ে মিশে গেলে রাজার চোখে পড়ব না।

বিরাজদত্ত। দেখ্‌ দেখ্‌ একবার নরোত্তমের কাণ্ডখানা দেখ্‌! আমরা এত লোক আছি, সবাইকে ঠেলেঠুলে কোথা থেকে এক তালপাতার পাখা নিয়ে রাজাকে বাতাস করতে লেগে গেছে।

কৌণ্ডিল্য। তাই তো হে, লোকটার আস্পর্ধা তে কম নয়।

মাধব। ওকে জোর করে ধরে সরিয়ে দিতে হচ্ছে – ও কি রাজার পাশে দাঁড়াবার যুগ্যি।

কৌণ্ডিল্য। ওহে রাজা কি আর এটুকু বুঝবে না? এ যে অতিভক্তি।

বিরাজদত্ত। না হে না – রাজাদের যদি মগজই থাকবে তাহলে মুকুট থাকবার দরকার কী। ওই তালপাখার হাওয়া খেয়েই ভুলবে।


[সকলের প্রস্থান
ঠাকুরদাকে লইয়া কুম্ভের প্রবেশ

কুম্ভ। এখনই এই রাস্তা দিয়েই যে গেল।

ঠাকুরদা। রাস্তা দিয়ে গেলেই রাজা হয় নাকি রে।

কুম্ভ। দাদা, একেবারে স্পষ্ট চোখে দেখা গেল – একজন না দুজন না, রাস্তার দুধারের লোক তাকে দেখে নিয়েছে।

ঠাকুরদা। সেইজন্যেই তো সন্দেহ। কবে আমার রাজা রাস্তার লোকের চোখ ধাঁধিয়ে বেড়ায়।

কুম্ভ। তা আজকে যদি মর্জি হয়ে থাকে, বলা যায় কী।