পলাতকা

               মারের চোটে জরজর

          পথের ধারে পড়ে ছিল মর-মর,

                  খোঁড়া কুকুরটারে

     বাঁচিয়ে তুলে রাখলে মহেশ আপন ঘরের দ্বারে।

     আরেকটি তার পোষ্য ছিল , ডাক - নাম তার সুর্মি,

কেউ জানে না জাত যে কী তার, মুসলমান কি কাহার কিংবা কুর্মি।

          সে-বছরে প্রয়াগেতে কুম্ভমেলায় নেয়ে

     ফিরে আসতে পথে দেখে চার বছরের মেয়ে

          কেঁদে বেড়ায় বেলা দুপুর দুটোয়।

               মা নাকি তার ওলাউঠোয়

               মরেছে সেই সকালবেলায় ;

                   মেয়েটি তাই বিষম ভিড়ের ঠেলায়

     পাক খেয়ে সে বেড়াচ্ছিল ভয়েই ভেবাচেকা,—

                   মহেশকে যেই দেখা

কী ভেবে যে হাত বাড়াল জানি না কোন্‌ ভুলে ;

     অমনি পাগল নিল তারে কাঁধের ' পরে তুলে,

     ভোলানাথের জটায় যেন ধুতরোফুলের কুঁড়ি ;

          সে অবধি তার ঘরের কোণটি জুড়ি

সুর্মি আছে ওই পাগলের পাগলামির এক স্বচ্ছ শীতল ধারা

            হিমালয়ে নির্ঝরিণীর পারা।

             এখন তাহার বয়স হবে দশ,

     খেতে শুতে অষ্টপ্রহর মহেশ তারই বশ।

   আছে পাগল ওই মেয়েটির খেলার পুতুল হয়ে

          যত্নসেবার অত্যাচারটা সয়ে।

          সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার থেকে ফিরে

     যেমনি মহেশ ঘরের মধ্যে ঢোকে ধীরে ধীরে,

          পথ-হারানো মেয়ের বুকে আজো যেন জাগায় ব্যাকুলতা —

     বুকের ' পরে ঝাপিয়ে প ' ড়ে গলা ধ ' রে আবোলতাবোল কথা।

          এই আদরের প্রথম - বানের টান

               হলে অবসান

          ওদের বাসায় আমি যেতেম রাতে।

     সামান্য কোন্‌ কথা হত এই পাগলের সাথে।