মানসী
    বাঁধের জলরেখা      ঝলসে যায় দেখা,
      জটলা করে তীরে    রাখাল এসে।
    চলেছে পথখানি       কোথায় নাহি জানি,
      কে জানে কত শত     নূতন দেশে।

 

      হায় রে রাজধানী     পাষাণকায়া!
    বিরাট মুঠিতলে       চাপিছে দৃঢ়বলে
      ব্যাকুল বালিকারে,    নাহিকো মায়া!
    কোথা সে খোলা মাঠ,      উদার পথঘাট,
      পাখির গান কই,    বনের ছায়া!

 

      কে যেন চারি দিকে     দাঁড়িয়ে আছে,
      খুলিতে নারি মন     শুনিবে পাছে!
    হেথায় বৃথা কাঁদা,        দেয়ালে পেয়ে বাধা
      কাঁদন ফিরে আসে     আপন-কাছে।

 

      আমার আঁখিজল       কেহ না বোঝে,
      অবাক্‌ হয়ে সবে      কারণ খোঁজে।
    ‘কিছুতে নাহি তোষ,     এ তো বিষম দোষ
      গ্রাম্য বালিকার       স্বভাব ও যে!
    স্বজন প্রতিবেশী       এত যে মেশামেশি,
      ও কেন কোণে বসে    নয়ন বোজে?’

 

      কেহ বা দেখে মুখ    কেহ বা দেহ—
      কেহ বা ভালো বলে,    বলে না কেহ।
    ফুলের মালাগাছি       বিকাতে আসিয়াছি,
      পরখ করে সবে,   করে না স্নেহ।
      সবার মাঝে আমি     ফিরি একেলা।
      কেমন করে কাটে     সারাটা বেলা!
    ইঁটের’পরে ইঁট,        মাঝে মানুষ-কীট—
      নাইকো ভালোবাসা,     নাইকো খেলা।