বধূ
    ‘বেলা যে পড়ে এল,     জলকে চল্ ‌!’—
   পুরানো সেই সুরে         কে যেন ডাকে দূরে,
      কোথা সে ছায়া সখী,      কোথা সে জল!
      কোথা সে বাঁধা ঘাট,      অশথতল!
    ছিলাম আনমনে       একেলা গৃহকোণে,
       কে যেন ডাকিল রে    ‘জলকে চল্‌’।

 

      কলসী লয়ে কাঁখে—     পথ সে বাঁকা,
    বামেতে মাঠ শুধু            সদাই করে ধূ ধূ,
      ডাহিনে বাঁশবন       হেলায়ে শাখা।
    দিঘির কালো জলে          সাঁঝের আলো ঝলে,
      দু ধারে ঘন বন        ছায়ায় ঢাকা।
    গভীর থির নীরে           ভাসিয়া যাই ধীরে,
      পিক কুহরে তীরে       অমিয়-মাখা।
    পথে আসিতে ফিরে,         আঁধার তরুশিরে
      সহসা দেখি চাঁদ     আকাশে আঁকা।

 

    অশথ উঠিয়াছে    প্রাচীর টুটি,
        সেখানে ছুটিতাম    সকালে উঠি।
    শরতে ধরাতল     শিশিরে ঝলমল,
        করবী থোলো থোলো    রয়েছে ফুটি।
    প্রাচীর বেয়ে বেয়ে      সবুজে ফেলে ছেয়ে
        বেগুনি-ফুলে-ভরা   লতিকা দুটি।
    ফাটলে দিয়ে আঁখি     আড়ালে বসে থাকি,
        আঁচল পদতলে   পড়েছে লুটি।

 

      মাঠের পরে মাঠ,   মাঠের শেষে
      সুদূর গ্রামখানি    আকাশে মেশে।
    এ ধারে পুরাতন     শ্যামল তালবন
      সঘন সারি দিয়ে    দাঁড়ায় ঘেঁষে।