সন্ধ্যাসংগীত

সেই ছন্দে কী কথার পড়েছে অভাব —

কানেতে সহসা তাই উঠিত বাজিয়া,

হৃদয় সহসা তাই উঠিত চমকি।

জানি না কিসের তরে, কী মনের দুখে

দুয়েকটি দীর্ঘশ্বাস উঠিত উচ্ছ্বসি।

শিখর হতে শিখরে, বন হতে বনে,

অন্যমনে একেলাই বেড়াতাম ভ্রমি —

সহসা চেতন পেয়ে উঠিয়া চমকি

সবিস্ময়ে ভাবিতাম, কেন ভ্রমিতেছি,

কেন ভ্রমিতেছি তাহা পেতেম না ভাবি!

 

একদিন নবীন বসন্ত-সমীরণে

বউ-কথা-কও যবে খুলেছে হৃদয়,

বিষাদে সুখেতে মাখা প্রশান্ত কী ভাব

প্রাণের ভিতরে যবে রয়েছে ঘুমায়ে,

দেখিনু বালিকা এক, নির্ঝরের ধারে

বনফুল তুলিতেছে আঁচল ভরিয়া।

দুপাশে কুন্তলজাল পড়েছে এলায়ে,

মুখেতে পড়েছে তার উষার কিরণ।

কাছেতে গেলাম তার, কাঁটা বাছি ফেলি

কানন-গোলাপ তারে দিলাম তুলিয়া।

প্রতিদিন সেইখানে আসিত দামিনী

তুলিয়া দিতাম ফুল, শুনাতেম গান,

কহিতাম বালিকারে কত কী কাহিনী,

শুনি সে হাসিত কভু, শুনিত না কভু,

আমি ফুল তুলে দিলে ফেলিত ছিঁড়িয়া।

ভর্ৎসনার অভিনয়ে কহিত কত কী!

কভু বা ভ্রূকুটি করি রহিত বসিয়া,

হাসিতে হাসিতে কভু যাইত পলায়ে,

অলীক শরমে কভু হইত অধীর।

কিন্তু তার ভ্রূকুটিতে, শরমে, সংকোচে,

লুকানো প্রেমেরি কথা করিত প্রকাশ!