সন্ধ্যাসংগীত

ভ্রমিতাম যমুনার পুলিনে পুলিনে,

মনে হত এ রজনী পোহাতে চাবে না,

সহসা কোকিল-রব শুনিয়া উষায়,

সহসা যখনি শ্যামা গাহিয়া উঠিত,

চমকিয়া উঠিতাম, কহিতাম মোরা,

‘ এ কী হোল! এরি মধ্যে পোহাল রজনী! '

দেখিতাম পূর্ব দিকে উঠেছে ফুটিয়া

শুকতারা, রজনীর বিদায়ের পথে,

প্রভাতের বায়ু ধীরে উঠিছে জাগিয়া,

আসিছে মলিন হয়ে আঁধারের মুখ।

তখন আলয়ে দোঁহে আসিতাম ফিরি,

আসিতে আসিতে পথে শুনিতাম মোরা

গাইছে বিজনকুঞ্জে বউ-কথা-কও।

ক্রমশ বালককাল হল অবসান,

নীরদের প্রেমদৃষ্টে পড়িল মালতী,

নীরদের সাথে তার হইল বিবাহ।

মাঝে মাঝে যাইতাম তাদের আলয়ে ;

দেখিতাম মালতীর শান্ত সে হাসিতে

কুটিরেতে রাখিয়াছে প্রভাত ফুটায়ে!

 

সঙ্গীহারা হয়ে আমি ভ্রমিতাম একা,

নিরাশ্রয় এ-হৃদয় অশান্ত হইয়া

কাঁদিয়া উঠিত যেন অধীর উচ্ছ্বাসে।

কোথাও পেত না যেন আরাম বিশ্রাম।

অন্যমনে আছি যবে, হৃদয় আমার

সহসা স্বপন ভাঙি উঠিত চমকি।

সহসা পেত না ভেবে, পেত না খুঁজিয়া

আগে কী ছিল রে যেন এখন তা নাই।

প্রকৃতির কি-যেন কী গিয়াছে হারায়ে

মনে তাহা পড়িছে না। ছেলেবেলা হতে

প্রকৃতির যেই ছন্দ এসেছি শুনিয়া

সেই ছন্দোভঙ্গ যেন হয়েছে তাহার ;