সন্ধ্যাসংগীত

হৃদয়ে জাগিত যেন প্রভাত পবন,

নূতন জীবন যেন সঞ্চরিত মনে!

ছেলেবেলাকার যত কবিতা আমার

সে হাসির কিরণেতে উঠেছিল ফুটি।

মালতী ছুঁইত মোর হৃদয়ের তার,

তাইতে শৈশব-গান উঠিত বাজিয়া।

এমনি আসিত সন্ধ্যা ; শ্রান্ত জগতেরে

স্নেহময় কোলে তার ঘুম পাড়াইতে।

সুবর্ণ-সলিলসিক্ত সায়াহ্ন-অম্বরে

গোধূলির অন্ধকার নিঃশব্দ চরণে

ছোটো ছোটো তারাগুলি দিত ফুটাইয়া,

নন্দনবনের যেন চাঁপা ফুল দিয়ে

ফুলশয্যা সাজাইত সুরবালাদের।

মালতীরে লয়ে পাশে আসিতাম হেথা ;

সন্ধ্যার সংগীতস্বরে মিলাইয়া স্বর

মৃদুস্বরে শুনাতেম শৈশব-কবিতা।

হর্ষময় গর্বে তার আঁখি উজলিত —

অবাক ভক্তির ভাবে ধরি মোর হাত

একদৃষ্টে মুখপানে রহিত চাহিয়া।

তার সে হরষ হেরি আমারো হৃদয়ে

কেমন মধুর গর্ব উঠিত উথলি!

ক্ষুদ্র এক কুটির আছিল আমাদের,

নিস্তব্ধ-মধ্যাহ্নে আর নীরব সন্ধ্যায়

দূর হতে তটিনীর কলস্বর আসি

শান্ত কুটিরের প্রাণে প্রবেশিয়া ধীরে

করিত সে কুটিরের স্বপন রচনা।

দুই জনে ছিনু মোরা কল্পনার শিশু —

বনে ভ্রমিতাম যবে, সুদূর নির্ঝরে

বনশ্রীর পদধ্বনি পেতাম শুনিতে।

যাহা কিছু দেখিতাম সকলেরি মাঝে

জীবন্ত প্রতিমা যেন পেতেম দেখিতে!

কত জোছনার রাত্রে মিলি দুই জনে