সন্ধ্যাসংগীত

তটিনীর কলধ্বনি শুনিতে এয়েছি।

হে তটিনী, ও কি গান গাইতেছ তুমি!

দিন নাই, রাত্রি নাই, এক তানে শুধু

এক সুরে এক গান গাইছ সতত —

এত মৃদুস্বরে ধীরে, যেন ভয় করি

সন্ধ্যার প্রশান্ত স্বপ্ন ভেঙে যায় পাছে!

এ নীরব সন্ধ্যাকালে তব মৃদু গান

একতান ধ্বনি তব শুনে মনে হয়

এ হৃদি-গানেরি যেন শুনি প্রতিধ্বনি!

মনে হয় যেন তুমি আমারি মতন

কী এক প্রাণের ধন ফেলেছ হারায়ে।

এসো স্মৃতি, এসো তুমি এ ভগ্ন হৃদয়ে —

সায়াহ্ন-রবির মৃদু শেষ রশ্মিরেখা

যেমন পড়েছে ওই অন্ধকার মেঘে

তেমনি ঢালো এ হৃদে অতীত-স্বপন!

কাঁদিতে হয়েছে সাধ বিরলে বসিয়া,

কাঁদি একবার, দাও সে ক্ষমতা মোরে!

যাহা কিছু মনে পড়ে ছেলেবেলাকার

সমস্ত মালতীময় — মালতী কেবল

শৈশবকালের মোর স্মৃতির প্রতিমা।

দুই ভাই বোনে মোরা আছিনু কেমন!

আমি ছিনু ধীর শান্ত গম্ভীর-প্রকৃতি,

মালতী প্রফুল্ল অতি সদা হাসি হাসি।

ছিল না সে উচ্ছ্বসিনী নির্ঝরিণী সম

শৈশব-তরঙ্গবেগে চঞ্চলা সুন্দরী,

ছিল না সে লজ্জাবতী লতাটির মতো

শরম-সৌন্দর্যভরে ম্রিয়মাণ-পারা।

আছিল সে প্রভাতের ফুলের মতন,

প্রশান্ত হরষে সদা মাখানো মুখানি ;

সে হাসি গাহিত শুধু উষার সংগীত —

সকলি নবীন আর সকলি বিমল।

মালতীর শান্ত সেই হাসিটির সাথে