সন্ধ্যাসংগীত

সমস্ত জগৎ যেন দিল প্রতিধ্বনি

‘ এ জনমে আর বুঝি পাব না দেখিতে।’

গভীর নিশীথে যথা আধো ঘুমঘোরে

সুদূর শ্মশান হতে মরণের রব

শুনিলে হৃদয় উঠে কাঁপিয়া কেমন,

তেমনি বিজন সেই তটিনীর তীরে

একাকী আঁধারে যেন শুনিনু কী কথা,

সমস্ত হৃদয় যেন উঠিল শিহরি!

আর বার কহিলাম, ‘ বিদায় — ভুলো না।’

তখন কি জানিতাম এই নদীতীরে

এই সন্ধ্যাকালে আর তোমারি সমুখে

এমনি মনের দুখে হইবে কাঁদিতে?

তখনো আমার এই বাল্যজীবনের

প্রভাত-নীরদ হতে নব-রক্তরাগ

যায় নি মিলায়ে সখি, তখনো হৃদয়

মরীচিকা দেখিতেছিল দূর শূন্যপটে।

নামিনু সংসারক্ষেত্রে যুঝিনু একাকী,

যাহা কিছু চাহিলাম পাইনু সকলি।

তখন ভাবিনু যাই প্রেমের ছায়ায়

এতদিনকার শ্রান্তি যাবে দূর হয়ে।

সন্ধ্যাকালে মরুভূমে পথিক যেমন

নিরখিয়া দেখে যবে সম্মুখে পশ্চাতে

সুদূরে দেখিতে পায় প্রান্ত দিগন্তের

সুবর্ণ জলদজালে মণ্ডিত কেমন,

সে-দিকে তারকাগুলি চুম্বিছে প্রান্তর,

সায়াহ্নবালার সেথা পূর্ণতম শোভা,

কিন্তু পদতলে তার অসীম বালুকা

সারাদিন জ্বলি জ্বলি তপন-কিরণে

ফেলিছে সায়াহ্নকালে জ্বলন্ত নিশ্বাস।

তেমনি এ সংসারের পথিক যাহারা

ভবিষ্যৎ অতীতের দিগন্তের পানে

চাহি দেখে স্বর্গ সেথা হাসিছে কেবল