সন্ধ্যাসংগীত

কিন্তু হা, শ্মশানে যথা চাঁদের জোছনা

শ্মশানের ভীষণতা বাড়ায় দ্বিগুণ —

মালতীর সেই হাসি দেখিয়া তেমনি

নিজের এ হৃদয়ের ভগ্ন-অবশেষ

দ্বিগুণ পড়িত যেন নয়নে আমার!

তাহার আদর পেয়ে ভুলিনু যাতনা,

কিন্তু হায়, দেখি নাই, বিজন-শয্যায়

কত দিন কাঁদিয়াছে মালতী গোপনে!

সে যখন দেখিত, তাহার বাল্যসখা

দিনে দিনে অবসাদে হইছে মলিন,

দিনে দিনে মন তার যেতেছে ভাঙিয়া,

তখন আকুলা বালা রাত্রে একাকিনী

কাঁদিয়া দেবতা কাছে করেছে প্রার্থনা —

বালিকার অশ্রুময় সে প্রার্থনাগুলি

আর কেহ শুনে নাই অন্তর্যামী ছাড়া!

দেখি নাই কত রাত্রি একাকিনী গিয়া

যমুনার তীরে বসি কাঁদিত বিরলে!

একাকিনী কেঁদে কেঁদে হইত প্রভাত,

এলোথেলো কেশপাশে পড়িত শিশির,

চাহিয়া রহিত উষা ম্লান মুখপানে!

বিষময়, বহ্নিময়, বজ্রময় প্রেম,

এ স্নেহের কাছে তুই ঢাক মুখ ঢাক।

তুই মরণের কীট, জীবনের রাহু,

সৌন্দর্য-কুসুম-বনে তুই দাবানল,

হৃদয়ের রোগ তুই, প্রাণের মাঝারে

সতত রাখিস তুই পিপাসা পুষিয়া,

ভুজঙ্গ বাহুর পাকে মর্ম জড়াইয়া

কেবলি ফেলিস তুই বিষাক্ত নিশ্বাস,

আগ্নেয় নিশ্বাসে তোর জ্বলিয়া জ্বলিয়া

হৃদয়ে ফুটিতে থাকে তপ্ত রক্তস্রোত।

জরজর কলেবর, আবেশে অসাড়,

শিথিল শিরার গ্রন্থি, অচেতন প্রাণ,