সন্ধ্যাসংগীত

আসিব না দিতে তব শান্তিতে ব্যাঘাত,

এ জন্মের তরে সখি কহো একবার

একটি স্নেহের বাণী অভাগার’ পরে,

ভ্রমিয়া বেড়াব যবে সুদূর বিদেশে

সে-কথার প্রতিধ্বনি বাজিবে হৃদয়ে! '

 

থামো স্মৃতি — থামো তুমি, থামো এইখানে,

সম্মুখে তোমার ও কি দৃশ্য মর্মভেদী?

মালতী আমার সেই প্রাণের ভগিনী,

শৈশবকালের মোর খেলাবার সাথী

যৌবনকালের মোর আশ্রয়ের ছায়া,

প্রতি দুঃখ প্রতি সুখ প্রতি মনোভাব

যার কাছে না বলিলে বুক যেত ফেটে,

সেই সে মালতী মোর হয়েছে বিধবা!

আপনার দুঃখে মগ্ন স্বার্থপর আমি

ভালো করে পারিনু না করিতে সান্ত্বনা!

নিজের চোখের জলে অন্ধ এ নয়নে

পরের চোখের জল পেনু না দেখিতে!

ছেলেবেলাকার সেই পুরানো কুটিরে

হাসিতে হাসিতে এল মালতী আমার,

সে-হাসির চেয়ে ভালো তীব্র অশ্রুজল!

কে জানিত সে-হাসির অন্তরে অন্তরে

কালরাত্রি অন্ধকার রয়েছে লুকায়ে!

একদিনো বলে নি সে কোনো দুঃখ-কথা,

একদিনো কাঁদে নি সে সমুখে আমার!

জানি জানি মালতী সে স্বর্গের দেবতা!

নিজের প্রাণের বহ্নি করিয়া গোপন,

পরের চোখের জল দিত সে মুছায়ে।

ছেলেবেলাকার সেই হাসিটি তাহার

সমস্ত আনন তার রাখিত উজ্জ্বলি,

কত-না করিত যত্ন করিত সান্ত্বনা।

হাসিতে হাসিতে কত করিত আদর!