অনুবাদ-চর্চা

১৮৪

৩১শে মে, ৮২। আজ হইতে আমি চৌষট্টি বৎসরে পা দিলাম। যে পক্ষাঘাত রোগ প্রায় দশ বৎসর পূর্ব্বে আমাকে প্রথম আক্রমণ করিয়াছে, তখন হইতেই নানা দশান্তরের মধ্য দিয়া থাকিয়াই গিয়াছে, এখন যেন যেন তাহা বেশ শান্তভাবে স্থায়ী আট্টা গাড়িয়া বসিয়াছে এবং সম্ভবতঃ এই ভাবেই চলিবে। আমি সহজেই ক্লান্ত হইয়া পড়ি, বেশি দূর হাঁটিতে পারি না; কিন্তু আমার স্ফূর্ত্তি সেরা দরের। আমি প্রায় প্রতিদিনই বাহিরে ঘুরিয়া বেড়াই–কখনও কখনও রেলে কি নৌকাপথে শত শত মাইল জুড়িয়া এক একটি লম্বা চক্র দিয়া আসি, বেশির ভাগ সময় খোলা হাওয়ায় থাকি-রোদপোড়া ও মোটাসোটা হইয়াছি; লোকযাত্রা, জনসাধারণ, সমাজের উন্নতি ও সাময়িক সমস্যাসকল সম্বন্ধে আমার ঔৎসুক্য বজায় রাখি। দিনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় আমি বেশ আরামে থাকি। আমার মানসিকশক্তি বরাবর যেমন ছিল সেইরূপ সম্পূর্ণ অবিকৃতই আছে, যদিও শারীরিক হিসাবে আমি অর্দ্ধ-অসাড় এবং যত দিন বাঁচি আমার এইরূপ থাকা সম্ভবপর। কিন্তু আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়াছে বলিয়া মনে হয়–আমার বন্ধুরা একান্ত নিষ্ঠাবান ও অনুরক্ত, আত্মীয়স্বজন স্নেহশীল, আর শত্রুদিগকে বাস্তবিক হিসাবের মধ্যেই ধরি না।

১৮৫

ভারতবর্ষে নানাপ্রকার তালী-জাতীয় বৃক্ষ হইতে ন্যূনপক্ষে তিন লক্ষ টন চিনি প্রতিবৎসর উৎপন্ন হয়। এই পরিমাণ চিনির মধ্যে বঙ্গদেশে প্রায় এক লক্ষ টন উৎপন্ন হয় বলিয়া উক্ত হইয়াছে। মাদ্রাজের য়ুরোপীয় হৌসগুলি গুড় পরিষ্কার ও চোলাই করিবার অভিপ্রায়ে প্রায় পঁচিশ হাজার টন গুড় প্রতিবৎসর ক্রয় করিয়া থাকে। সুতরাং আমাদের এমন একটি ব্যবসায় আছে, সহজ বৎসরে যাহাতে উৎপন্ন দ্রব্যের বাৎসরিক মূল্য মোটামুটি পঁচিশ লক্ষ পাউণ্ড। এ বিষয়ে অতি সামান্যই অনুসন্ধান হইয়াছে। চিনির উৎপাদন হিসাবে তালী-জাতীয় বৃক্ষের শ্রেষ্ঠতা এই যে, বৎসর হইতে বৎসরান্তে তাহার উৎপন্ন চিনির পরিমাণ সমান থাকে এবং ইক্ষুর ন্যায় ইহার অতিবৃষ্টি বা বন্যার কোনো প্রভাব নাই। চাষের খরচ নাম মাত্র লাগে; এবং ইক্ষু অপেক্ষা তালে দীর্ঘকাল চিনি করিবার মরসুম সম্ভব হয়।

১৮৬

অপরন্তু ইক্ষুর বেলায় গুড় তৈয়ারির মণ-করা খরচ অপেক্ষা খেজুর ও তালের বেলায় খরচ কম লাগে। উভয়ত্রই চিনির পরিমাণ ন্যূনাধিক সমান। তাল-গুড়ের রঙের উন্নতি করিতে পারিলে আরও ভাল দাম পাওয়া যাইতে পারিত। সতর্কতার সহিত সংগৃহীত হইলে তালের রস খুবই বিশুদ্ধ হইয়া থাকে এবং ইক্ষু-শর্করা ব্যতীত অন্যজাতীয় চিনি ইহাতে অতিঅল্প থাকে। বাঙ্গালা দেশে ভাল পদ্ধতিতে এই রস সংগৃহীত হয় না, কিন্তু এই পদ্ধতির উন্নতি করা যায়। এই রস পাইতে কোনো পেষণযন্ত্র লাগে না।

১৮৭

‘গুড্‌ হেলথ্‌’ কাগজে সম্ভবত সম্পাদক Dr. J. H. Kellogg -কর্ত্তৃক কতকটা চমক-লাগানো এই একটি উক্তি প্রকাশিত হইয়াছে যে, তারুণ্য ও বার্দ্ধক্যের মধ্যবর্ত্তী কাল সংক্ষিপ্ত হইয়াছে। অর্থাৎ তিনি মনে করেন, দমনপ্রাপ্ত না হইলে যেসকল অবজননকর শক্তি লোক ধ্বংস করিবে তাহাদেরই প্রভাবে এখন বার্দ্ধক্যের বিশেষ লক্ষণ অপেক্ষাকৃত সকাল সকাল দেখা দিতেছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও প্রতিষেধক ঔষধের উন্নতিসাধন সত্ত্বেও দীর্ঘ আয়ুতে উপনীত হয় এমন ব্যক্তির পরিমাণ পূর্ব্বের চেয়ে এখন অনেক কম। ডাক্তার কেলগ শঙ্কা করেন যে যৌবনের সঙ্গে মিলিত হইবার জন্য বার্দ্ধক্য মন্দ গতিতে নামিয়া আসিতেছে, ইহার ফলে অবশেষে আমরা বিশ বৎসর বয়সে বৃদ্ধ হইয়া উঠিব।