অনুবাদ-চর্চা

১৮৮

গত বিশ বৎসরের মধ্যে, বিশেষভাবে সভ্য দেশসকলে, জাতিগত জীর্ণতার প্রমাণ এত প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত হইয়াছে যে, বর্ত্তমান কালে কোনো নৃতত্ত্ব-অনুশীলনকারী এ কথা স্বীকার করিতে দ্বিধা করিবেন না যে, প্রত্যেক সভ্যসমাজে যেসকল অবজনন-প্রভাব বর্ত্তমান, প্রত্যহ তাহার প্রবলতা বৃদ্ধি পাইতেছে এবং সমূলে দমন প্রাপ্ত না হইলে কালক্রমে তাহা অবশ্যই লোক ধ্বংস করিবে। লোকসংখ্যার অবশিষ্ট ভাগের তুলনায় শতায়ু লোকের পরিমাণের সুস্পষ্ট হ্রস্বতাই জনগণের অবজননের সুনিশ্চিত প্রমাণসকলের মধ্যে অন্যতম, লেখক প্রায় চল্লিশ বৎসর ধরিয়া তৎপ্রতি লোকের মনোযোগ অভিনির্দ্দেশ করিতেছেন। ফরাসী দেশে শতায়ু লোকের পরিমাণ জনসংখ্যার এক লক্ষ নব্বই হাজারে একজন; ইংলণ্ডে দুই লক্ষে একজন, জর্ম্মানিতে সাত লক্ষে একজন।

১৮৯

আজকাল কুইনাইন এবং অন্যান্য সিঙ্কোনা-জাত পদার্থের উৎপাদন অত্যধিক পরিমাণে জাভার ডচ্‌ গভর্ণমেন্টের হস্তেই আছে। এই প্রবল একচেটিয়া ব্যবসার প্রতিকূলে ভারতবর্ষে দার্জ্জিলিঙে কয়েকটি এবং উহা অপেক্ষা অল্প পরিমাণে মান্দ্রাজ প্রেসিডেন্সির নীলগিরিতে অবস্থিত কয়েকটি সিঙ্কোনার কৃষিক্ষেত্র আমাদের আছে। বর্ত্তমান কাল পর্য্যন্ত ভারতবর্ষে সিঙ্কোনার কারখানা-সকলকে প্রধানত জাভা হইতে ক্রীত বল্কলের উপর অত্যন্ত বেশি নির্ভর করিতে হইয়াছে। ১৮৮৭ হইতে ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত যত দিন কুইনাইনের প্রয়োজন অল্প ছিল তত দিন বিদেশী গাছ ক্রয় করা হয় নাই এবং বার্ষিক যে ৩০০,০০০ পাউণ্ড্‌ বল্কলের জোগান পাওয়া যাইত এবং যাহা হইতে ২৬০০ পাউণ্ড কুইনাইন উৎপন্ন হইত, তাহাই ভারতবর্ষের তখনকার প্রয়োজনের পক্ষে যথেষ্ট ছিল। ১৮৯২ হইতে ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে চাহিদা যখন বাড়িয়া উঠিল, তখন প্রায় ২৫০,০০০ পাউণ্ড্‌ গাছের ছাল বাংলা দেশেই উৎপন্ন হইয়াছে, কিন্তু অন্যূন ২৫১,৫০০ পাউণ্ড্‌ ক্রয় করা হইয়াছিল এবং তাহা হইতে ৮০০০ পাউণ্ড্‌ কুইনাইন উৎপন্ন হয়।

১৯০

বাঙ্গলার সিঙ্কোনা-কৃষিক্ষেত্র সংখ্যায় দুইটি; তাহার মধ্যে যেটি প্রাচীনতর সেটি রিয়াঙ্গ উপত্যকার দুই পার্শ্বে মংপোতে অবস্থিত। ঐ উপত্যকার নদীটি তিস্তা ভ্যালি রেলওয়ের রিয়াঙ্গ ষ্টেশনে তিস্তার সহিত যুক্ত হইয়াছে। ঐ কৃষিক্ষেত্র ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত হয়, এবং বর্ত্তমানে কুইনাইন প্রস্তুত করিবার যে কারখানা আছে তাহা উহারই মধ্যে। কিন্তু ঐ ক্ষেত্রটি এখন ব্যবহার দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া গিয়াছে এবং উহাকে অনেক পরিমাণে পুনর্বনান্বিত করা হইয়াছে। যত দিন পর্য্যন্ত না ঐ বন বাড়িয়া উঠিবে পুনর্ব্বার পরিষ্কৃত হইবে এবং নূতন সিঙ্কোনা বৃক্ষগুলি পরিণতি প্রাপ্ত হইবে, তত দিন উহা কাজে লাগাইবার উপযুক্ত পরিমাণে গাছের ছাল জোগাইতে পারিবে না।

১৯১

অতএব আরো দশ কি পনেরো বৎসর মংপো কৃষিক্ষেত্র হইতে আবশ্যকমত সরবরাহের আশা করা নিষ্প্রয়োজন। সৌভাগ্যক্রমে, তখনকার সিঙ্কোনা-কৃষি-পরিদর্শক Sri David Prain এর দূরদর্শিতা ইহার প্রতিকার করিয়া রাখিয়াছিল এবং ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে দার্জ্জিলিঙের কালিম্পং সাব্‌ডিভিসনে তিস্তা নদীর পূর্ব্বদিকে একটি নূতন কৃষিক্ষেত্রের সূচনা করা হইয়াছিল। এই ক্ষেত্রটিতে প্রায় ৯০০০ একর জমি আছে এবং ইহা একদা ঘনবনাচ্ছন্ন ছিল। কর্ষণের পক্ষে অধিকতর উপযোগী ভূমির অনেকাংশই পরিষ্কার করা হইয়াছে এবং এখন মংপো কারখানাতে যত গাছের ছাল ব্যবহৃত হয়, তাহার অধিকাংশই এই মন্‌সঙ্গ কৃষিক্ষেত্র নামে বিদিত স্থান হইতে আসে।