প্রকৃতির প্রতিশোধ
সন্ন্যাসী। কেহ নাই।
বালিকা। আমি তবে কাছে রব, ত্যেজিবে না মোরে?
সন্ন্যাসী। তুমি না ত্যেজিলে মোরে আমি ত্যেজিব না।
বালিকা। যখন সবাই এসে কহিবে তোমারে—
রঘুর দুহিতা, ওরে ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না,
অনার্য অশুচি ও যে ম্লেচ্ছ ধর্মহীন—
তখনো কি ত্যেজিবে না? রাখিবে কি কাছে?
সন্ন্যাসী। ভয় নাই, চল্ বৎসে, তোর গৃহ যেথা।
[প্রস্থান
চতুর্থ দৃশ্য
পথপার্শ্বে বালিকার ভগ্নকুটির
বালিকা। পিতা!
সন্ন্যাসী। আহা,পিতা বলে কে ডাকিলি ওরে!
সহসা শুনিয়া যেন চমকি উঠিনু।
বালিকা। কী শিক্ষা দিতেছ প্রভু, বুঝিতে পারি নে।
শুধু বলে দাও মোরে আশ্রয় কোথায়।
কে আমারে ডেকে নেবে, কাছে করে নেবে,
মুখ তুলে মুখপানে কে চাহিবে মোর?
সন্ন্যাসী। আশ্রয় কোথায় পাবি এ সংসারমাঝে!
এ জগৎ অন্ধকারে প্রকাণ্ড গহ্বর—
আশ্রয় আশ্রয় বলে শত লক্ষ প্রাণী
বিকট গ্রাসের মাঝে ধেয়ে পড়ে গিয়া,
বিশাল জঠরকুণ্ডে কোথা পায় লোপ।
মিথ্যা রাক্ষসীরা মিলে বাঁধিয়াছে হাট,
মধুর দুর্ভিক্ষরাশি রেখেছে সাজায়ে,
তাই চারি দিক হতে আসিছে অতিথি।
যত খায় ক্ষুধা জ্বলে, বাড়ে অভিলাষ,
অবশেষে সাধ যায় রাক্ষসের মতো
জগৎ মুঠায় করে মুখেতে পুরিতে।
হেথা হতে চলে আয় — চলে আয় তোরা।
বালিকা। এখানে তো সকলেই সুখে আছে পিতা।