রুদ্রচণ্ড
দ্বিতীয় দৃশ্য
দৃশ্য—অরণ্য। রুদ্রচণ্ড ও অমিয়া
রুদ্রচণ্ড।–
বার বার ক’রে আমি     ব’লেছি, অমিয়া, তোরে
          কবিতা আলাপ-তরে নহে এ কুটীর,
তবু তোরা বার বার      মিছা কি প্রলাপ গাহি
          বনের আঁধার চিন্তা দিস্‌ ভাঙাইয়া!
পাতালের গূঢ়তম      অন্ধতম অন্ধকার!
          অধিকার কর’ এর বালিকা-হৃদয়,
ও হৃদের সুখ আশা     ও হৃদের উষালোক
          মৃদুহাসি মৃদুভাব ফেল গো গ্রাসিয়া!
হিমাদ্রিপাষাণ চেয়ে     গুরুভার মন মোর,
          তেমনি উহার মন হোক গুরুভার!
হিমাদ্রিতুষার চেয়ে     রক্তহীন প্রাণ মোর,
          তেমনি কঠিন প্রাণ হউক উহার!
কুটীরের চারি দিকে     ঘনঘোর গাছপালা
          আঁধারে কুটীর মোর রেখেছে ডুবায়ে—
এই গাছে, কতবার     দেখেছি, অমিয়া তুই,
          লতিকা জড়ায়েছিস আপনার মনে—
ফুলন্ত লতিকা যত     ছিঁড়িয়া ফেলেছি রোষে,
          এ সকল ছেলেখেলা পারি নে দেখিতে!
আবার কহি রে তোরে,     বসি চাঁদ কবি-সনে
          এ অরণ্যে করিস নে কবিতা-আলাপ!
অমিয়া।–
যাহা যাহা বলিয়াছ     সব শুনিয়াছি পিতা—
          আর আমি আনমনে গাহি না ত গান,
আর আমি তরুদেহে     জড়ায়ে দিই না লতা,
          আর আমি ফুল তুলে গাঁথি না তো মালা!
কিন্তু পিতা, চাঁদ কবি,     এত তারে ভালবাসি,
          সে আমার আপনার ভায়ের মতন—
বল মোরে বল পিতা,     কেন দেখিব না তারে!