ভগ্নহৃদয়
এক দৃষ্টে চেয়ে আছ ভূমিতল-পানে!
হাসিতে হাসিতে, সখি, দুটা ক্ষুদ্র কথা
কহিনু, তা’তেই মনে পেয়েছে কি ব্যথা?
ললিতা।     [স্বগত]   একা বসে ভাবিয়াছি কত— কতবার,
কোন গুণ নাই মোর, কি হবে আমার?
হা ললিতা! কি করিস্‌— দেখিস্‌ না চেয়ে?
শুধু দুটা কথা হা— রে—     পারিস্‌ না কহিবারে?
দুটা আদরের কথা— বুদ্ধিহীন মেয়ে!
দেখিস্‌ না— দুটা কথা কহিলি না ব’লে,
আদরের ধন তোর—     প্রাণের সর্ব্বস্ব তোর
হারায়— হারায় বুঝি— যায় বুঝি চলে!
শুধু দুটা কথা তুই কহিলি না ব’লে!
কি কহিবি? হা অবোধ, ভাবনা কি তায়!
মুক্তকণ্ঠে বল্‌ মন যা বলিতে চায়?—
মনের গোপন ধামে     ডাকিস যে শত নামে
সেই নাম মুখ ফুটে ডাক্‌ রে তাহার!
একবার প্রাণ খুলে বল্‌ প্রাণেশ্বরে—
“মোর প্রেম, চিন্তা, আশা সব তোমা-’পরে;
নির্ব্বোধ নির্গুণ বলে— নাথ— স্বামী— প্রভু,
অসহায় অবলারে ত্যজিও না কভু!”
দিবস রজনী ভুলি     বুকে তারে রাখ্‌ তুলি,
“ভালোবাসি” “ভালোবাসি” বল্‌ শতবার,
আলিঙ্গনে বেঁধে বেঁধে হৃদয় তাহার!
কিন্তু লজ্জা?— দূর হ রে— লজ্জা, দূর হ রে—
বিষময় বাহু তোর     বাঁধি বাঁধি শত ডোর
জীর্ণ করিয়াছে মোর মন স্তরে স্তরে!
আর না— আর না লজ্জা— দূর হ এখন!
চূর্ণ চূর্ণ ভেঙ্গে আর ফেলিস না মন!
শিথিল করে দে তোর     শতেক বন্ধন-ডোর,
মুহূর্তের তরে মুখ তুলি একবার—
বন্ধনজর্জর মন শুধু রে মুহূর্ত ক্ষণ
বাহিরে বাতাসে গিয়া বাঁচুক আবার!