ভগ্নহৃদয়
করেছি দারুণ পণ করিবারে পলায়ন,
নিষ্ঠুর মধুর বাক্যে ফিরায়ো না আর!
ও অনল হতে সাধ দূরে থাকিবার—
ফিরায়ো না মোরে, সখি, ফিরায়ো না আর!


ষষ্ঠ সর্গ
কবি ও মুরলা
কবি।      উন্মাদিনী কল্লোলিনী ক্ষুদ্র এক নির্ঝরিণী
শিলা হতে শিলান্তরে লুটিয়া লুটিয়া,
নেচে, নেচে, অট্টহেসে,     ফেনময় মুক্তকেশে
প্রশান্ত হ্রদের কোলে পড়ে ঝাঁপাইয়া!
শুধু মুহূর্তের তরে     তিল বিচলিত করে
সে প্রশান্ত সলিলের শুধু এক পাশ—
উন্মত্ত কোলাহল অধীর তরঙ্গদল
মুহূর্তের মাঝে সব পায় গো বিনাশ!
দেখ, সখি, গৃহমাঝে দেখ গো চাহিয়া,
নাচ, গান, বাদ্য, হাসি—      আমোদ কল্লোলরাশি—
নিশীথপ্রশান্তি-মাঝে পড়িছে ঝাঁপিয়া!
আলোকে আলোকে গৃহ উঠেছে মাতিয়া,
স্ফটিকে স্ফটিকে আলো নাচে বিদ্যুতিয়া,
শত রমণীর পদ পড়ে তালে তালে।
চরণের আভরণ      নেচে নেচে প্রতিক্ষণ
শত আলোকের বাণ হানে এককালে,
মূর্ছিয়া পড়িছে আলো হীরকে হীরকে!
শতকৃষ্ণ আঁখিতারা হানিছে আলোকধারা—
শত হৃদে পড়ে গিয়া ঝলকে ঝলকে!
চারি দিকে ছুটিতেছে আলোকের বাণ,
চারি দিকে উঠিতেছে হাসি বাদ্য গান।
কিন্তু হেথা চেয়ে দেখ কি শান্ত যামিনী!
কি শুভ্র জোছনা ভায়! কি শান্ত বহিছে বায়!
কেমন ঘুমন্ত আছে প্রশান্ত তটিনী!