ভগ্নহৃদয়
সপ্তম সর্গ
অনিল ললিতা
অনিল। [গাহিতে গাহিতে]
কাছে তার যাই যদি কত যেন পায় নিধি,
তবু হরষের হাসি ফুটে ফুটে ফুটে না!
কখনো বা মৃদু হেসে আদর করিতে এসে
সহসা সরমে বাধে, মন উঠে উঠে না!
রোষের ছলনা করি দূরে যাই, চাই ফিরি,
চরণ বারণ তরে উঠে উঠে উঠে না।
কাতর নিশ্বাস ফেলি, আকুল নয়ন মেলি
চাহি থাকে, লাজ-বাঁধ তবু টুটে টুটে না!
যখন ঘুমায়ে থাকি মুখপানে মেলি আঁখি
চাহি থাকে, দেখি দেখি সাধ যেন মিটে না!
সহসা উঠিলে জাগি, তখন কিসের লাগি
সরমেতে ম’রে গিয়ে কথা যেন ফুটে না!
লাজময়ি! তোর চেয়ে দেখি নি লাজুক মেয়ে,
প্রেমবরিষার স্রোতে লাজ তবু টুটে না!
ললিতা। [স্বগত]
পাষাণে বাঁধিয়া মন আজ করেছিনু পণ
কাছে যাব— কথা কব— যাচিব আদর আজ!
ওরে, মন, ওরে মন, কার কাছে তোর লাজ?
আপনা র চেয়ে যারে করেছিস্ আপনার
তার কাছে বল্ দেখি কিসের সরম আর?
অনিল। ফুল তুলিবার ছলে ওই যে ললিতা আসে,
মনে মনে জানা আছে এলেই আমার কাছে
অমনি হাতটি ধরি বসাব আমার পাশে।
অন্য দিকে -পানে আমি চাহিয়া রহিব আজ,
দেখিব কেমন করি কোথা তার থাকে লাজ?
ললিতা। [ফুল তুলিতে তুলিতে]
নাহয় বসিনু কাছে কি তাহাতে দোষ আছে?
বসিব নাথের পাশে তাহাতে কি আসে যায়?