ভগ্নহৃদয়
মুরলা।      স্বগত
আমি যদি হইতাম হাস্যোল্লাসময়
নির্ঝরিণী, বরষার নবোচ্ছ্বাসময়!
হরষেতে হেসে হেসে      কবির কাছেতে এসে
ডুবাতেম ভালোবেসে আদরে আদরে!
যদি কভু দেখিতাম মুহূর্তের তরে
বিষাদ ছাইছে পাখা কবির অধরে,
হাসিয়া কত-না হাসি      ঢালিয়া সংগীতরাশি
মৃদু অভিমান করি’     মৃদু রোষভরে—
মৃদু হেসে মৃদু কেঁদে      বাহুতে বাহুতে বেঁধে
দিতেম বিষাদভার সব দূর করে!
কিন্তু আমি অভাগিনী ছেলেবেলা হতে
এ গম্ভীর মুখে মম      অন্ধকার ছায়া-সম
রহিয়াছি সতত কবির সাথে সাথে!
আমি লতা গুরুভার     মেলি শাখা অন্ধকার
হেন ঘন আলিঙ্গনে করেছি বেষ্টন,
উন্নত মাথায় তাঁর      পড়িতে দিই না আর
চাঁদের হাসির আলো, রবির কিরণ!
হা মুরলা, মুরলা রে,     এমনি করেই হা রে
হারালি— হারালি বুঝি ভালোবাসা-ধন!
বুক, ফেটে যা রে, অশ্রু কর্ বরিষণ—
কবি তোর অশ্রুধার     দেখিতে পাবে না আর,
যে কিরণে আছে ডুবি তাঁহার নয়ন!
দুর্বল— দুর্বল হৃদি!     আবার! আবার!
আবার ফেলিস্‌ তুই অশ্রুবারিধার?
আবার আবার কেন     হৃদয়দুয়ারে হেন
পাষাণে পাষাণে গাঁথা     কে যেন হানিছে মাথা,
কে যেন উন্মাদ-সম করে হাহাকার—
সমস্ত হৃদয়ময় ছুটিয়া আমার!
থাম্‌ থাম্‌, থাম্‌ হৃদি, মোছ্‌ অশ্রুধার!
কবি যদি সুখী হয় কি ভাবনা আর!
আহা কবি, সুখী হও!     তুমি কবি সুখী হও!