ভগ্নহৃদয়
দশম সর্গ
মুরলা
যার কোন রূপ নাই, যার কোন গুণ নাই,
তবুও যে হতভাগ্য ভালোবাসে মনে,
দুই দিন বেঁচে থাকে, কেহ নাহি জানে তাকে,
ভালোবাসে, দুঃখ, সহে, মরে গো বিজনে।
ক্ষুদ্র তৃণফুল এক জন্মে অন্ধকারে,
দুই দণ্ড বেঁচে থাকে কীটের আগার—
শুকায়ে পড়ে সে নিজ কাঁটার মাঝারে,
নিজেরি কাঁটার মাঝে সমাধি তাহার।
কি কথা কোস্ রে তুই অকৃতজ্ঞ মন!
স্নেহময় দয়াময় কবি সে আমার,
এই তৃণফুলেরে কি করে নি যতন?
এরেও কি রাখে নাই হৃদয়ে তাহার?
ছেলেবেলা হতে মোরে রেখেছেন পাশে।
যখনি পূরিত মন নব গীতোচ্ছ্বাসে
আমারেই তাড়াতাড়ি শুনাতেন তিনি,
এত তাঁর ছিল সঙ্গী আছিল সঙ্গিনী!
এত যে পাইনু, তাঁরে কি পারিনু দিতে?
মুরলার যাহা কিছু ছিল— ভালোবাসা—
ক্ষুদ্র এই হৃদয়ের সুখ দুঃখ আশা!
একটু পারি নি তাঁরে সান্ত্বনা করিতে,
মুছাই নি এক বিন্দু নয়নের ধার—
যাহা কিছু সাধ্য ছিল করেছি আমার!
আমি যদি না হতেম বাল্যসখী তাঁর,
নলিনীবালারে যদি পেতেন সঙ্গিনী,
করিতে হত না তাঁরে এত হাহাকার—
কতই না সুখী আহা হতেন গো তিনি!
বিধাতা! বিধাতা! যদি তাই গো করিতে!
মুরলা জন্মিল কেন নলিনী থাকিতে!
এখনো কেন গো তার হয় না মরণ?