ভগ্নহৃদয়
এ সংসারে মুরলারে কার প্রয়োজন?
ওই আসিছেন কবি!— এসো কবি!— এসো কবি!
একবার অতি কাছে এসো মুরলার!
তুমি যবে কাছে থাক কবি গো আমার—
আপনারে ভুলে যাই— ওই মুখপানে চাই
তোমা ছাড়া কিছু মনে নাহি থাকে আর!
তুমি যবে দূরে থাক, কবি গো, তখন
আপনারি ক্ষুদ্র দুঃখে থাকি অচেতন!
বড়ো যে দুর্বল দীন মুরলা তোমার!
যুঝিতে মনের সাথে পারে না সে আর!
থেকো না, থেকো না দূরে থেকো না গো প্রভু,
মুরলারে ত্যাগ করে যেও না গো কভু!
শ্রান্ত ক্লান্ত অতি দীন—     বলোহীন রক্তহীন
ধুলায় লুণ্ঠিত এই অতি ক্ষুদ্র প্রাণ,
তোমার মনের ছায়ে দেহ এরে স্থান!
আমারে লুকায়ে রাখ প্রসারিয়া পাখা,
তোমারি বুকের কাছে রব আমি ঢাকা!
নহিলে দুর্বল এই দীন অসহায়
পথ হারাইয়া কোথা ভ্রমিয়া বেড়ায়?
তুমি, কবি, ছিলে নাকো— একেলা বিজনে
নিজ হাতে বসি হেথা দুঃখের কণ্টকলতা
রোপিতেছিলাম, কবি, আপনারি মনে।
তাই নিয়ে অনুক্ষণ     যেন আদরের ধন
আত্মদাহী কল্পনায় খেলায়েছি কত,
যতনে ঢেলেছি তায় অশ্রুধারা শত,
এবে প্রতি মুল তার হৃদয়ের চারি ধার
দংশে শত বাহু মেলি বৃশ্চিকের মত!
তুমি, সখা, এসো কাছে— মারিতেছি জ্বলি—
ও চরণ দিয়ে, কবি, ফেল সব দলি—
প্রতি শাখা— প্রতি পত্র— প্রতি মূল তার!
এসো, কবি, বলো দাও— এ হৃদয়ে বলো দাও—
আর কভু বর্ষিব না অশ্রুবারিধার!