ভগ্নহৃদয়
কভু কহে, “চল্‌ সখি, সেই চাঁপা গাছে
আজিকে সকাল বেলা কুঁড়ি দেখেছিনু মেলা,
এতক্ষণে বুঝি তারা উঠিয়াছে ফুটে,
চল্‌, সখি, একবার দেখে আসি ছুটে!”
কত-না বিলম্ব পথে করিল এমন,
বড়োই অধীর হয়ে উঠিল গো মন।
কতক্ষণ পরে শেষে     গান গেয়ে হেসে হেসে
যেথা আমি বসেছিনু আসিল সেথায়—
চলিয়া গেল সে, যেন দেখে নি আমায়
একেলা বসিয়া আমি রহিনু আঁধারে
সমস্ত রজনী, সখি, সেই পথধারে।
কেন, সখি, এত হাসি, এক কেন গান?
কিসের উল্লাসে এত পূর্ণ ছিল প্রাণ?
মন এক দলিবার আছে গো ক্ষমতা,
যখন তখন খুসী দিতে পারে ব্যথা,
তাই গর্ব্বে কোন দিকে ফিরেও না চায়?
তাই এত হাসে হাসি, এত গান গায়?
কৃপাণ যে হাসি হাসে ঝলসি নয়ন,
বিদ্যুৎ যে হাসি হাসে অশনিদশন!
অথবা হয়ত, সখি, আমারিই ভুল;
হয়ত সে মনে মনে      কল্পনায় অকারণে
প্রণয়ে সন্দেহ করে হয়েছে আকুল!
অভিমানে জানাইতে চায় মোর কাছে—
রাখে না আমার আশা,     নাই কিছু ভালোবাসা,
ভালো না বেসেও মোরে বড়ো সুখে আছে।
যখন গাহিতেছিল     মরমে দহিতেছিল—
হাসি সে মুখের হাসি আর কিছু নয়,
গোপনে কাঁদিতেছিল অশান্ত হৃদয়!
আজ আমি তার কাছে যাই একবারে—
শুধাই, অমন ক’রে কেন সে নিষ্ঠুর মোরে
দিয়াছে বেদনা দলি হৃদয় আমার?
[কবির প্রস্থান