ভগ্নহৃদয়
মুরলা। আসিয়াছে সন্ধ্যা হয়ে নিস্তব্ধ গভীর—
তারা নাহি দেখা যায় কুয়াশা-ভিতরে,
একটি একটি করে পড়িছে শিশির
মুরলার মাথার শুকানো ফুল -’পরে!
জীর্ণ শাখা শীতবায়ে উঠে শিহরিয়া,
গাছের শুকনো পাতা পড়িছে ঝরিয়া!
ওঠ্ লো মুরলা, ওঠ্, দিন হল শেষ,
পর্ লো মুরলা, পর্ সন্ন্যাসিনীবেশ।
মুরলা? মুরলা কোথা? গেছে সে মরিয়া—
সেই যে দুখিনী ছিল বিষণ্ন মলিন,
সেই যে ভালো বাসিত হৃদয় ভরিয়া,
সেই যে কাঁদিত বনে আসি প্রতিদিন,
সে বালা মরিয়া গেছে, কোথায় সে আর?
ছিন্ন বস্ত্র, ম্লান মুখ, লয়ে দুঃখভার,
তাহার সে বুকের লুকানো কথা লয়ে
মরেছে সে বালা আজ সন্ধ্যার উদয়ে!
তবে এ কাহারে হেরি নিশীথে শ্মশানে?
ও একটি উদাসিনী সন্ন্যাসিনী যায়—
কারেও বাসে না ভালো, কারেও না জানে,
আপনার মনে শুধু ভ্রমিয়া বেড়ায়!
একটি ঘটনা ওর ঘটে নি জীবনে,
একটি পড়ে নি রেখা ওর শুন্য মনে!
পথ ছাড়, পান্থ, কিবা শুধাইছ আর?
জীবনে কাহিনী কিছু নাই বলিবার!
মুরলা, সত্যই তবে হলি সন্ন্যাসিনী?
সত্যই ত্যজিলি তোর যত কিছু আশা?
তবে রে বিলম্ব কেন, বসিয়া আছিস হেন?
এখনো কি— এখনো কি সব ফুরায় নি?
এখনো কি মনে মনে চাস ভালোবাসা?
বড়ো মনে সাধ ছিল রহিব হেথায়—
কষ্ট পাই, দুঃখ পাই, রব তাঁরি সাথ—
আজন্ম কালের তাঁর সহচরী হায়