ভগ্নহৃদয়
স্রোতোমুখে ছুটিয়াছি বিদ্যুতের মত
দিগ্বিদিক হারাইয়া হয়ে জ্ঞানহত।
চোখে না দেখিতে পাই, কানে না শুনিতে পাই,
তীব্রবেগে বহে বায়ু বধিরি শ্রবণ—
চারি দিকে টলমল তরঙ্গের কোলাহল,
আকাশে ছুটিছে তারা উল্কার মতন—
ঘুরিতে ঘুরিতে শেষে পড়ি গো আবর্তে এসে,
চৌদিকে ফেনায়ে উঠে ঊর্মির পর্ব্বত—
মস্তক ঘুরিয়া উঠে, সঘনে শোণিত ছুটে,
ঘুরিতে ঘুরিতে যাই কোথায় ভেবে না পাই—
তলায়ে তলায়ে যাই পাতালের পথ—
আঁধারে দেখিতে নারি এনু কোন্ ঠাঁই,
ঊর্দ্ধে হাত তুলি কিছু ধরিতে না পাই—
ঘুরি ঘুরি রাত্রি দিন হয়ে পড়ি জ্ঞানহীন,
নিম্নে কে চরণ ধরি করে আকর্ষণ!
কোথায় দাঁড়াব গিয়ে কে জানে তখন!
তবে আর কি করিব! যাই—যাই ভেসে—
পাষাণ বজ্রের মতো অদৃষ্টের মুষ্টি শত
হৃদয়েরে আকর্ষিছে ধরি তার কেশে!
কি করিতে পারি বলো আমি ক্ষুদ্র নর!
অদৃষ্টের সাথে কভু সাজে কি সমর!
দিন রাত্রি তুষানলে মরি তবে জ্ব’লে জ্ব’লে—
হাসুক সমস্ত ধরা তীব্র ঘৃণাহাসি,
সে মোরে করুক ঘৃণা যারে ভালোবাসি!
আপনার কাছে সদা হয়ে থাকি দোষী,
হৃদয়ে ঘনাতে থাক্ কলঙ্কের মসী!
যায় ভালোবাসা-তরে আকুল হৃদয়,
যার লাগি সহি জ্বালা তীব্র অতিশয়—
তারে ভালোবাসি ব’লে, তারি লাগি কাঁদি বলে,
তারি লাগি সহি ব’লে এতেক যাতনা—
সেই মোরে ঘৃণা ক’রে ভালোবাসিবে না!
তাই হোক, তাই হোক, ভাগ্য, তাই হোক—