প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
সতীশ। জেঠাইমা!
জেঠাইমা। কী বাপ!
সতীশ। বাবা কাল ভোরে জাহাজে করে কলম্বো যাবেন, তাই কালই লাহিড়িসাহেবের ছেলেকে মা চা খাওয়াতে ডেকেছেন, তুমি যেন সেখানে হঠাৎ গিয়ে পোড়ো না।
জেঠাইমা। আমার যাবার দরকার কী, সতীশ।
সতীশ। যদি যাও তো তোমার এ-কাপড়ে চলবে না, তোমাকে—
জেঠাইমা। সতীশ, তোর কোনো ভয় নেই, আমি এই ঘরেই থাকব, যতক্ষণ তোর বন্ধুর চা খাওয়া না হয় আমি বার হব না।
সতীশ। জেঠাইমা, আমি মনে করছি, তোমার ঐ সামনের ঘরটাতেই তাকে চা খাওয়াবার বন্দোবস্ত করব। এ-বাড়িতে আমাদের যে ঠাসাঠাসি লোক — চা খাবার ডিনার খাবার মতো ঘর একটাও খালি পাবার জো নেই। মার শোবার ঘরে সিন্দুক-ফিন্দুক কত কী রয়েছে, সেখানে কাকেও নিয়ে যেতে লজ্জা করে।
জেঠাইমা। আমার ও-ঘরেও তো জিনিসপত্র —
সতীশ। ওগুলো বার করে দিতে হবে। বিশেষত তোমার ঐ বঁটি-চুপড়ি-বারকোশগুলো কোথাও না লুকিয়ে রাখলে চলবে না।
জেঠাইমা। কেন বাবা, ওগুলোতে এত লজ্জা কিসের। তাদের বাড়িতে কি কুটনো কুটবার নিয়ম নেই।
সতীশ। তা জানি নে জেঠাইমা, কিন্তু চা খাবার ঘরে ওগুলো রাখা দস্তুর নয়। এ দেখলে নরেন লাহিড়ি নিশ্চয় হাসবে, বাড়ি গিয়ে তার বোনদের কাছে গল্প করবে।
জেঠাইমা। শোনো একবার, ছেলের কথা শোনো। বঁটি-চুপড়ি তো চিরকাল ঘরেই থাকে। তা নিয়ে ভাইবোনে মিলে গল্প করতে তো শুনি নি।
সতীশ। তোমাকে আর-এক কাজ করতে হবে, জেঠাইমা — আমাদের নন্দকে তুমি যেমন করে পার এখানো ঠেকিয়ে রেখো। সে আমার কথা শুনবে না, খালি-গায়ে ফস্ করে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হবে।
জেঠাইমা। তাকে যেন ঠেকালেম, কিন্তু তোমার বাবা যখন খালি-গায়ে —
সতীশ। তিনি তো কাল কলম্বোয় যাবেন।
জেঠাইমা। বাবা সতীশ, যা মন হয় করিস, কিন্তু আমার ঘরটাতে তোদের ঐ খানাটানাগুলো —
সতীশ। সে ভালো করে সাফ করিয়ে দেব এখন।
বিধুমুখী। পারলুম না। — জানো তো সতীশ, তিনি যা ধরেন তা কিছুতেই ছাড়েন না। কত টাকা হলে তোমার মনের মতো পোশাক হয় শুনি।
সতীশ। একটা মর্নিং সুট তো মাসি অর্ডার দিয়েছেন, আর একটা লাউঞ্জ সুটে একশো টাকার কাছাকাছি লাগবে। একটা চলনসই ইভনিং ড্রেস দেড়শো টাকার কমে কিছুতেই হবে না।
বিধুমুখী। বলো কী, সতীশ। এ তো আড়াইশো টাকার ধাক্কা, এত টাকা—
সতীশ। মা, ঐ তোমাদের দোষ। এক ফকিরি করতে চাও সে ভালো, আর যদি ভদ্রসমাজে মিশতে হয় তো খরচ করতে