একান্নবর্তী
দৌলতচন্দ্র ও কানাই

দৌলত। হৃদয় যখন ভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে তখন কোম্পানির দমকল এলেও থামাতে পারে না। একান্নবর্তী পরিবার-প্রথা সম্বন্ধে সভায় দাঁড়িয়ে অনর্গল বলতে লাগলুম, সভাপতি ঘুমিয়ে পড়াতে নিষেধ করবার কেউ রইল না। শেষকালে দুজন ছোকরা এসে দুই হাত ধরে আমাকে টেনে বসিয়ে দিলে। সেদিন এত উৎ সাহ হয়েছিল!

কানাই। বটে, তা হবার কথাই তো। তা, আপনি কী বলেছিলেন?

দৌলত। আমি বলেছিলেম, স্বার্থত্যাগের একমাত্র উপায় একান্নবর্তী পরিবার। যেখানে পরের অর্থেই জীবননির্বাহ হয় সেখানে স্বার্থের কোনো প্রয়োজনই হয় না। খবরের কাগজে আমার বক্তৃতা খুব রটে গেছে-তারা সকলেই বলছে দুঃখের বিষয় দৌলতবাবুর পরিবার কেউ নেই, তিনি একলা।

দীর্ঘনিশ্বাস

জয়নারায়ণের প্রবেশ

জয়নারায়ণ। জয় হোক বাবা! আমি তোমার পিসে।

দৌলত। সে কী মশায়, আমার তো পিসি নেই।

জয়নারায়ণ। না, তাঁর কাল হয়েছে বটে।

দৌলত। পিসি কোনোকালেই যে ছিলেন না।

জয়নারায়ণ। ( ঈষৎ হাসিয়া) সে কী করে হয় বাবা! আমি তা হলে তোমার পিসে হলুম কী করে! (কানাইয়ের প্রতি) কী বলেন মশায়!

কানাই। তা তো বটেই।

দৌলত। যে আজ্ঞে, তা আপনার কী অভিপ্রায়ে আগমন?

জয়নারায়ণ। অভিপ্রায় তেমন বিশেষ কিছু নয়। শুনলুম আমরা পৃথক হয়ে আছি ব'লে খবরের কাগজে নিন্দে করছে, তাই একত্র বাস করতে এসেছি।

দৌলত। আপনার সম্পত্তি কিছু আছে?

জয়নারায়ণ। কিছু নাই, কোনো বালাই নেই, কোনো উৎ পাত নেই। কেবল এক খুড়তুতো ভাই আছে — তা, সেও এল ব'লে।

দৌলত। তা বটে। তাঁর কিছু আছে?

জয়। কিছু না, কোনো ঝঞ্ঝাট না। কেবল দুই স্ত্রী ও চারটি শিশুসন্তান ; তারাও এল ব'লে। এতক্ষণ এসে পড়ত ; যাত্রা করবার বেলা দুই স্ত্রীতে চুলোচুলি বেধে গেছে, তাই যা দেরি।

দৌলত। কানাই, কি করা যায়!

জয়নারায়ণ। তোমাকে কিছুই করতে হবে না — তারা আপনারাই আসবে, ভাবনা কী দৌলত! এত অল্পে কাতর হোয়ো না। তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যেই এসে পৌঁছবে।