শেষরক্ষা

কমল ও ইন্দুর প্রবেশ

 

কমল। ছি ছি, ইন্দু, তুই কী কাণ্ডটাই করলি বল্‌ দেখি?

ইন্দু। তা বেশ করেছি। ভাই, পরে গোল বাধার চেয়ে আগে গোল চুকে যাওয়া ভালো।

কমল। এখন পুরুষ জাতটাকে কীরকম লাগছে।

ইন্দু। মন্দ না ভাই, একরকম চলনসই।

কমল। তুই যে বলেছিলি ইন্দু, গদাই গয়লাকে তুই কক্‌খনো বিয়ে করবি নে!

ইন্দু। না ভাই, গদাই নামটি খারাপ নয়, তা তোমরা যাই বলো। তোমার কল্লোলকুমার, লাবণ্যকিশোর, কাকলীকণ্ঠ, সুস্মিতমোহনের চেয়ে সহস্র গুণে ভালো। গদাই নামটি খুব আদরের নাম, অথচ পুরুষমানুষকে বেশ মানায়। রাগ করিস নে দিদি, তোর বিনোদের চেয়ে ঢের ভালো —

কমল। কী হিসেবে ভালো শুনি।

ইন্দু। বিনোদবিহারী নামটা বাণভট্টের কাদম্বরীতেই চলে, আঠারো-গজি সমাসের মধ্যে। গদাই বেশ সাদা সিধে, ওর মধ্যে বোপদেবের হস্তক্ষেপ করবার জো নেই। আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি, মা দুর্গা কার্তিকের চেয়ে গণেশকেই বেশি ভালোবাসেন। গদাই নামটি আমার গদাইগণেশ, তোমার বিনোদকার্তিকের চেয়ে ভালো।

কমল। কিন্তু যখন বই ছাপাবে, বইয়ে ও নাম তো মানাবে না।

ইন্দু। আমি তো ছাপতে দেব না, খাতাখানি আগে আটক করে রাখব। আমার ততটুকু বুদ্ধি আছে দিদি!

কমল। তা, যে নমুনা দেখিয়েছিলি! তোর সেটুকু বুদ্ধি আছে জানি, কিন্তু শুনেছি বিয়ে করলে স্বামীর লেখা সম্বন্ধে মত বদলাতে হয়।

ইন্দু। আমার তো তার দরকার হবে না। আমার কবি কেবল আমারই কবি, পৃথিবীতে তাঁর কেবল একটিমাত্র পাঠক।

কমল। ছাপবার খরচ বেঁচে যাবে —

ইন্দু। সবাই তাঁর কবিত্বের প্রশংসা করলে আমার প্রশংসার মূল্য থাকবে না।

কমল। সবাই প্রশংসা করবে, ঐ আশঙ্কাটা তাকে করতে হবে না। যা হোক, তোর গয়লাটিকে তোর পছন্দ হয়েছে, তা নিয়ে তোর সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই নে। তাকে নিয়ে তুই চিরকাল সুখে থাক্‌ বোন! তোর গোয়াল দিনে দিনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক।

ইন্দু। ঐ বিনোদবাবু আসছেন। মুখটা ভারি বিমর্ষ দেখছি।

[ ইন্দুর প্রস্থান

বিনোদের প্রবেশ

কমল। তাঁকে এনেছেন?

বিনোদ। তিনি তাঁর বাপের বাড়ি গেছেন, তাঁকে আনবার তেমন সুবিধে হচ্ছে না।

কমল। আমার বোধ হচ্ছে, তিনি যে আমার সঙ্গিনীভাবে এখানে থাকেন সেটা আপনার আন্তরিক ইচ্ছে নয়।

বিনোদ। আপনাকে আমি বলতে পারি নে, তিনি এখানে আপনার কাছে থাকলে আমি কত সুখী হই। আপনার দৃষ্টান্তে তাঁর কত শিক্ষা হয়।

কমল। আমার দৃষ্টান্ত হয়তো তাঁর পক্ষ সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। শুনেছি আপনি তাঁকে অল্পদিন হল বিবাহ করেছেন, হয়তো