শেষরক্ষা
তাঁকে ভালো করে জানেন না।

বিনোদ। তা বটে। কিন্তু যদিও তিনি আমার স্ত্রী তবু এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে, আপনার সঙ্গে তাঁর তুলনা হতে পারে না।

কমল। ও কথা বলবেন না। আপনি হয়তো জানেন না, আমি তাঁকে বাল্যকাল হতে চিনি। তাঁর চেয়ে আমি যে কোনো অংশে শ্রেষ্ঠ এমন বোধ হয় না।

বিনোদ। আপনি তাঁকে চেনেন?

কমল। খুব ভালোরকম চিনি।

বিনোদ। আমার সম্বন্ধ তিনি আপনার কাছে কোনো কথা বলেছেন?

কমল। কিছু না। কেবল বলেছেন, তিনি আপনার ভালোবাসার যোগ্য নন। আপনাকে সুখী করতে না পেরে এবং আপনার ভালোবাসা না পেয়ে তাঁর সমস্ত জীবনটা ব্যর্থ হয়ে আছে।

বিনোদ। এ তাঁর ভারি ভ্রম। তবে আপনার কাছে স্পষ্ট স্বীকার করি, আমিই তাঁর ভালোবাসার যোগ্য নাই। আমি তাঁর প্রতি বড়ো অন্যায় করেছি, কিন্তু সে তাঁকে ভালোবাসি নে ব'লে নয়।

কমল। তবে আর-একটি সংবাদ আপনাকে দিই। আপনার স্ত্রীকে আমি এখানে আনিয়ে রেখেছি।

বিনোদ। ( আগ্রহে) কোথায় আছেন তিনি, আমার সঙ্গে একবার দেখা করিয়ে দিন।

কমল। তিনি ভয় করছেন পাছে আপনি তাঁকে ক্ষমা না করেন — যদি অভয় দেন —

বিনোদ। বলেন কী, আমি তাঁকে ক্ষমা করব! তিনি যদি আমাকে ক্ষমা করতে পারেন —

কমল। তিনি কোনোকালেই আপনাকে অপরাধী করেন নি, সেজন্যে আপনি ভাববেন না —

বিনোদ। তবে এত মিনতি করছি, তিনি আমাকে দেখা দিচ্ছেন না কেন?

কমল। আপনি সত্যিই যে তাঁর দেখা চান, এ জানতে পারলে তিনি এক মুহূর্ত গোপনে থাকতেন না। তবে নিতান্ত যদি সেই পোড়ার মুখ দেখতে চান তো দেখুন।

মুখ উদ্‌ঘাটন

বিনোদ। আপনি! তুমি! কমল! আমাকে মাপ করলে!

ইন্দুর প্রবেশ

 

ইন্দু। মাপ করিস নে দিদি! আগে উপযুক্ত শাস্তি হোক, তার পরে মাপ।

বিনোদ। তা হলে অপরাধীকে আর-একবার বাসরঘরে আপনার হাতে সমর্পণ করতে হয়।

ইন্দু। দেখেছিস ভাই, কত বড়ো নির্লজ্জ! এরই মধ্যে মুখে কথা ফুটেছে। ওঁদের একটু আদর দিয়েছিস কি, আর ওঁদের সামলে রাখবার জো নেই। মেয়েমানুষের হাতে পড়েই ওঁদের উপযুক্ত শাসন হয় না। যদি নিজের জাতের সঙ্গে ঘরকন্না করতে হত তা হলে দেখতুম ওঁদের এত আদর থাকত কোথায়!

বিনোদ। তা হলে ভূ-ভার-হরণের জন্যে মাঝে মাঝে অবতারের আবশ্যক হত না ; পরস্পরকে কেটেকুটে সংসারটা অনেকটা সংক্ষেপ করে আনতে পারতুম।