প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
“ সুষমার মতো মেয়ের সুখী হবার জন্যে ভালোবাসার দরকার নেই। ”
“ কিসের দরকার আছে, টাকার?”
“ এটা তোমার যোগ্য কথা হল না বাঁশরি — এটা যদি বলত কলুটোলার ঘোষগিন্নি আশ্চর্য হতুম না। ”
“ আচ্ছা, ভুল করেছি। কিন্তু প্রশ্নটার উত্তর বাকি আছে। কিসের দরকার আছে সুষমার। ”
“ জীবনে ও একটা কোন্ লক্ষ্য ধরেছে, সেইটে ওর ধর্ম। সাধ্যমতো আমি যদি কিছু পরিমাণে তাকে সার্থক করতে পারি তা হলেই হল। ”
“ লক্ষ্যটা কী বোধহয় জান না। ”
“ জানবার চেষ্টাও করি নি। যদি আপনা হতে ইচ্ছে করে বলে জানতে পাব। ”
“ অর্থাৎ ওর লক্ষ্য তুমি নও, তোমার লক্ষ্য ওই মেয়ে। ”
“ তাই বলতে পারি। ”
“ এ তো পুরুষের মতো শোনাচ্ছে না, ক্ষত্রিয়ের মতো নয়ই। ”
“ আমার পৌরুষ দিয়ে ওর জীবন সম্পূর্ণ করব, ওর ব্রত সার্থক করব — আর কিছু চাই নে আমি। আমার শক্তিকে ওর প্রয়োজন আছে এই জেনে আমি খুশি। সেই কারণে সকলের মধ্যে আমাকেই ও বেছে নিয়েছে এই আমার গৌরব। ”
“ এতবড়ো পুরুষকে মন্ত্র পড়িয়েছে সন্ন্যাসী। বুদ্ধিকে ঘোলা করেছে, দৃষ্টিকে দিয়েছে চাপা। শুনলুম ভালো হল আমার, শ্রদ্ধা গেল ভেঙে ; বন্ধন গেল ছিঁড়ে। শিশুকে মানুষ করার কাজ আমার নয়, সে কাজের ভার সম্পুর্ণ দিলুম এই মেয়েকে। ”
এমন সময় ঘরে প্রবেশ করল মুক্তারাম। পদধূলি নিয়ে তাকে প্রণাম করলে সোমশংকর।
অগ্নিশিখার মতো বাঁশরি দাঁড়াল তার সামনে। বললে, “ আজ রাগ করবেন না। ধৈর্য ধরবেন, কিছু বলব, কিছু প্রশ্ন করব। ”
“ আচ্ছা বলো তুমি। ” – মুক্তারামের ইঙ্গিতে সোমশংকর চলে গেল।
“ জিজ্ঞাসা করি, সোমশংকরকে শ্রদ্ধা করেন আপনি। ”
“ বিশেষ শ্রদ্ধা করি। ”
“ তবে কেন এমন মেয়ের ভার দিচ্ছেন ওর কাঁধে যে ওকে ভালোবাসে না। ”
“ যে ভার দিয়েছি আমি তাকেই বলি মহদ্ভাব। বলি পুরস্কার। একমাত্র সোমশংকর সুষমাকে গ্রহণ করবার যোগ্য। ”
“ ওর চিরজীবনের সুখ নষ্ট করতে চান আপনি? ”
“ সুখকে উপেক্ষা করতে পারে ওই বীর মনের আনন্দে। ”
“ আপনি মানবপ্রকৃতিকে মানেন না? ”
“ নবপ্রকৃতিকেই মানি, তার চেয়ে নীচের প্রকৃতিকে নয়। ”
“ এতই যদি হল — বিবাহ ওরা নাই করত। ”
“ তের সঙ্গে ব্রতকে প্রাণের বন্ধনে যুক্ত করতে চেয়েছিলুম। খুঁজেছিলুম তেমন দুটি মানুষকে, দৈবাৎ পেয়েছি। এটা একটা সৃষ্টি হল। ”
আর কেউ হলে বাঁশরি জিজ্ঞাসা করত — ‘আপনি নিজেই করলেন না কেন? ' কিন্তু মুক্তারামের চোখের সামনে এ প্রশ্ন বেধে গেল।