ভগ্নহৃদয়
মুছাইয়া দিই আহা অশ্রুজল তোর!
মুরলা।     অশ্রু মুছায়ো না আর— বহুক যা বহিবার—
এখনি আপনা হতে থামিবে উচ্ছ্বাস!
এ অশ্রু মুছাতে, কবি, কিসের প্রয়াস!
ক্ষুদ্র হৃদয়ের কত ক্ষুদ্র সুখ দুখ
আপনি সে জাগি উঠে— আপনি শুকায় ফুটে,
চেয়েও দেখে না কেহ উঠুক-পড়ুক!
এস সখা, ওই কাঁধে রাখি এই মুখ
একে একে সব কথা কহ গো আমারে—
বড়ো ভাল বাস কি সে নলিনী বালারে?
কবি।     শুধু যদি বলি, সখি, ভালো বাসি তায়
এ মনের কথা যেন তাহে না ফুরায়।
ভালোবাসা ভালোবাসা সবাই ত কয়,
ভালোবাসা কথা যেন ছেলেখেলাময়!
প্রতি কাজে প্রতি পলে   সবাই যে কথা বলে
তাহে যেন মোর প্রেম প্রকাশ না হয়!
মনে হয় যেন, সখি, এত ভালোবাসা
কেহ কারে বাসে নাই,   কারো মনে আসে নাই—
প্রকাশিতে নারে তাহা মানুষের ভাষা!
মুরলা।     তাই হোক, ভালো তারে বাস প্রাণপণে!
তারে ছাড়া আর কিছু না থাকুক মনে!
কবি।     সে আমার ভালোবাসা না যদি পূরায়!
যেই প্রেম-আশা লয়ে রয়েছি উন্মত্ত হয়ে,
বিশ্ব দেখি হাস্যময় যাহার মায়ায়,
যদি সখি, ফিরে নাহি পাই ভালোবাসা—
ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে সেই প্রেম-আশা—
মুমূর্ষু আশার সেই গুরু দেহভার
সমস্ত জগৎ-ময় বহিয়া বেড়াতে হয়—
শ্রান্ত হৃদি দিবানিশি করে হাহাকার!
অসুস্থ আশার সেই মুমূর্ষু-নিশ্বাসে
যদি এ হৃদয় হয় শূন্য মরুভূমিময়,
হৃদয়ের সব বৃত্তি শুকাইয়া আসে—