ভগ্নহৃদয়
দিনরাত্রি মৃত ভার করিয়া বহন
ম্রিয়মাণ হয়ে যদি পড়ে এই মন!
মুরলা। ও কথা বোলো না, কবি, ভেবো নাক আর—
নিশ্চয় হইবে পূর্ণ প্রণয় তোমার।
কি-জানি-কি-ভাবময় ওই তব মুখ—
ওই তব সুধাময়— প্রেমময়— স্নেহময়—
সুকুমার— সুকোমল— করুণ ও মুখ—
হাসি আর অশ্রুজলে মাখানো ও মুখ—
রাখিতে প্রাণের কাছে এমন কে নারী আছে
পেতে না দিবেক তার প্রেমময় বুক!
শত ভাব উথলিছে ওই আঁখি দিয়া,
শত চাঁদ ওই খানে আছে ঘুমাইয়া—
মুছাইতে ও মধুর নয়নের ধার
কোন্ নারী দিবেনাক আঁচল তাহার!
মধুময় তব গান দিবারাত করি পান
ঘুমাইয়া পড়িবে সে হৃদয়ে তোমার।
বসি ওই পদমূলে মুগ্ধ আঁখিপাতা তুলে
দিন রাত্রি চেয়ে রবে ওই মুখপানে
সূর্য্যমুখী ফুল-সম অবাক নয়ানে!
হেন ভাগ্যবতী নারী কে আছে ধরায়
যেজন কবির প্রেম না চাহিয়া পায়!
[স্বগত] মুরলা রে, কোন আশা পূরিল না তোর—
কাঁদ্ তুই অভাগিনী এ জীবন-ভোর!
এ জনমে তো অশ্রু মুছাবে না কেহ,
এ জনমে ফুটিবে না তোর প্রেম স্নেহ!
কেহ শুনিবে না আর তোর মর্ম্মব্যথা,
ভালোবেসে তোর বুকে রাখিবে না মাথা!
বড়ো যদি শ্রান্ত হয়ে পড়ে তোর মন
কেহ নাহি কহিবারে আশ্বাসবচন!
মাতৃহারা শিশু-মত কেঁদে কেঁদে অবিরত
পথের ধুলার পরে পড়িবি ঘুমায়ে—
একটি স্নেহের নেত্র দেখিবে না চেয়ে?